সারমর্ম/ সারাংশ লেখার ক্ষেত্রে নির্দেশনা
সারমর্ম কিংবা সারাংশ লেখার দক্ষতা অর্জন করতে হলে নিয়মিত অনুশীলন করতে হয়। চর্চা যতই বেশি হয় ততই শিক্ষার্থীর পক্ষে রচনার মূল ভাববস্তু উপলদ্ধির ক্ষমতা ও রচনা নৈপুণ্য বাড়ে। সারমর্ম/সারাংশ লেখার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত দিকগুলো বিশেষ বিবেচনায় রাখা দরকার:
পঠন:
সারমর্ম বা সারাংশ লিখতে গেলে অনুচ্ছেদের তথ্য লিখলে চলে না,মূল ভাব বুঝে নিয়ে তাকে সংক্ষেপে প্রকাশ করতে হয়।তাই প্রথমে মুল ভাব বোঝার জন্য রচনাটি ভালোভাবে মনোযোগ দিয়ে পড়া দরকার।
মূল ভাব সন্ধান ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ চিহ্নিতকরণ:
পদত্ত রচনাংশে সাধারণত একটি মূল ভাব বা বক্তব্য থাকে।কখনো কখনো একাধিক মূল ভাব বা বক্তব্যও থাকতে পারে।তা উপলব্ধি করতে পারলে সারমর্ম ও সারাংশ লেখা সহজ হয়।মূল ভাব খুঁজে নেওয়ার একটা সহজ উপায় হল,যেসব বাক্য বা বাকাংশ মূল ভাবের দ্যোতক বলে মনে হয় সেগুলো চিহ্নিত করা।
বাহুল্য বর্জন:
অপ্রয়োজনীয় অংশ থেকে প্রয়োজনীয় অংশ আলাদা করার মাধ্যমে সহজ মুল ভাব বের করা হয়।এজন্য মূল রচনাংশে ব্যবহৃত উদ্ধৃতি,বর্ণনা,সংলাপ,উহদারণ,অলংকার(উপমা–রূপক)ইত্যাদি বাদ দিতে হয়।
ভিন্নতর প্রসঙ্গের অবতারণা না করা :
সারমর্ম কিংবা সারাংশ অবশ্যই মূল রচনার ভাবধারণার মধ্যে সীমিত থাকে।তাই মূল ভাবের মধ্যে বাইরে অন্য কোন ব্যক্তিগত মতামত বা মন্তব্য সারমর্ম/সারাংশে প্রকাশ করা চলে না।
(১০)
সারমর্ম / সারাংশ রচনার কৌশল :
ক. অনুচ্ছেদ :
সারমর্ম বা সারাংশ একটি অনুচ্ছেদে লেখা উচিত।
খ.প্রারম্ভিক বাক্য:
প্রারম্ভিক বাক্য যথাযথ সংযত বা আকর্ষণীয় হওয়া চাই।এতে পাঠক বা পরীক্ষক শুরুতেই চমৎকৃত হন।
গ.প্রসঙ্গ বাক্য :
প্রসঙ্গ বাক্য(মূল ভাবটুকু প্রকাশের চুম্বক বাক্য)সারমর্ম বা সারাংশ প্রথমে থাকলে ভালো।তা প্রয়োজনে মধ্যে কিংবা শেষে ও থাকতে পারে।
ঘ. প্রত্যক্ষ উক্তি:
মূলে প্রত্যক্ষ উক্তি থাকলে তা পরোক্ষ উক্তিতে সংক্ষেপে প্রকাশ করতে হয়।
ঙ.পুরুষ:
সারমর্ম বা সারাংশে উত্তম পুরুষে(আমি,আমরা)বা মধ্যম পুরুষে(তুমি,তোমরা)লেখা চলে না।
চ.উদ্ধৃতি:
মূলে কোন উদ্ধৃতাংশ থাকলে সারমর্মে উদ্ধৃতিচিহ্ন বর্জিত হবে এবং সংক্ষিপ্ত ও সংহতরুপে তা প্রকাশ করতে হবে।
ছ.ভাষা:
সারমর্ম ও সারাংশে ভাষা সরল ও সাবলীল হওয়া দরকার।তাই জটিল বাক্যের পরিবর্তে সরল বাক্য এবং দূরুহ শব্দের পরিবর্তে সহজ-সরল শব্দ ব্যবহার করা উচিত।
জ.হুবহু উদ্ধৃতি বা অনুকৃতি:
মূ্লের কোন অংশে হুবহু উদ্বৃতি বা অনুকৃতি সারমম বা সারার্শে গ্রহণীয় নয়।মুলত কোন অংশকে সামান্য ।দল-বদল করে লিখে দেওয়া ও উচিত।
ঝ.পরিসর :
সারমর্ম বা সারাংশ কত বড় বা ছোট হবে তা নির্ভর করে প্রদত্ত অংশে বর্ণিত বিষয়ের গুরুত্ব ও গভীরতার উপর।প্রদত্ত রচনার ভাববস্তু সুসংহত ও নিরেট ভাবে প্রকাশিত হলে তা সংক্ষেপ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।ফলে সারমর্ম বা সারাংশ মূলের সমান,অর্ধে,এক তৃতীয়াংশ বা তার কম হতে পারে।
ঞ.খসড়া:
সারমর্ম বা সারাংশ লেখার জন্য প্রথমে প্রদত্ত রচনার মূল ভাবটুকুর আলোকে একটি প্রাথমিক খসড়া দাঁড় করানো ভালো । তারপর প্রয়োজনমত পরিমার্জনা করে পুনর্লিখন করতে হয় ।
সারমর্ম বা সারাংশের নমুনা
১
কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদুর?
মানুষের মাঝে স্বর্গ- নরক,মানুষেতে সুরাসুর।
রিপুর তাড়নে যখনি মোদের বিবেক পায় গো লয়,
আত্মগ্লানির নরক- অনলে তখনি পুড়িতে হয় ।
প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁদনে যাবে মিলি পরস্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখনি আমাদেরি কুঁড়েঘরে ।
সারমর্ম:
স্বর্গ ও নরক কেবল সুদূর পরলোকের বিষয় নয়।ইহলোকেও এদের অস্তিত্ব রয়েছে। বিবেকহীন মানুষের অপকর্ম ও নিষ্ঠুরতার বিস্তার ঘটলে জগৎ হয়ে উঠে নরকতুল্য।আর মানুষে মানুষে সম্প্রীতিময় সম্পর্ক গড়ে উঠলে জগৎ হয়ে ওঠে স্বর্গীয় সুষমাময় ।
(১১)
২
তরুতলে বসে পান্থ শ্রান্তি করে দূর ,
ফল আস্বাদনে আনন্দ পায় প্রচুর ।
বিদায়ের কালে হাতে ডাল ভেঙে লয় ,
তরু তবু অকাতর কিছু নাহি কয় ।
দুর্লভ মানবজন্ম পেয়েছ যখন ,
তরুর আদর্শ কর জীবনের গ্রহণ।
পরার্থে আপন সুখ দিয়ে বিসর্জন
তুমি ও হও গো ধন্য তরুর মতোন ।
সারমর্ম :
গাছপালা ছায়া দিয়ে, ফল দিয়ে,শাখা দিয়ে মানুষের উপকার করে । পরের সেবা করেই বৃক্ষের জীবন ধন্য । মানুষের ও উচিত বৃক্ষের পরোপকারের আদর্শ জীবনে অনুসরণ করা । তাহলেই মানবজীবন ধন্য ও সার্থক হবে ।
৩
কে তুমি খুঁজিছ, জগদীশে ভাই আকাশ-পাতাল জুড়ে
কে তুমি ফিরিছ বনে –জঙ্গলে, কে তুমি পাহাড় –চুড়ে?
হায় ঋষি দরবেশ ,
বুকের মানিক বুকে ধরে তুমি খোঁজ তারে দেশে দেশে ,
সৃস্টি রয়েছে তোমা পানে চেয়ে , তুমি আছ চোখ বুঝে ,
স্রষ্টার খোঁজে আপনারে তুমি আপনি ফিরেছ খুঁজে ।
ইচ্ছা অন্ধ , আাঁখি খোল , দেখ দর্পণে নিজ কায়া ,
সকলের মাঝে প্রকাশ তাহার , সকলের মাঝে তিনি ,
আমারে দেখিয়া আমার অজানা জন্মদাতারে চিনি ।
সারমর্ম:
সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে সৃষ্টিকর্তার অবস্থান। নিজেকে চিনে সৃষ্টির সেবাতে আত্মনিয়োগ করে স্রষ্টাকে উপলদ্ধি করা যায় ।বৈরাগ্য সাধন করে তাকে পাওয়া যায় না ।
৪
বিপদে মোরে রক্ষা করো ,এ নহে মোর প্রার্থনা
বিপদে আমি না যেন করি ভয় ।
দু:খতাপে – ব্যথিত চিতে ,নাই বা দিলে সান্ত্বনা ,
সহায় মোর না যদি জুট, নিজের বল না যেন টুটে
সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতি ,লভিতে শুধু বঞ্চনা ,
নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়
আমারে তুমি করিবে ত্রাণ,এ নহে মোর প্রার্থনা
তরিতে পরি শকিতে যেন রয় ।
আমার ভার লাঘব করি , নাই –বা দিলে সান্ত্বনা ,
বহিতে পরি এমনি যেন হয় ।
(১২)
সারমর্ম :
দুঃখ বিপদ উত্তরণে মানুষের প্রধান অবলম্বন মানসিক দৃঢ়তা।অন্যের করূণা–নির্ভর না হয়ে আত্মশক্তি ও সংগ্রামী চেতনার বলেই মানুষ দুঃখ-কষ্ট,বিপদ বঞ্চনা মোকাবেলা করতে পারে। আত্মশক্তির বলেই জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে হয় ।
৫
আসিতেছে শুভদিন
দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা,শুধিতে হইবে ঋণ!
হাতুড়ি শাবল গাঁইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়,
পাহাড়–কাটা সে পথের দুপাশে পড়িল যাদের হাড়,
তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর ,মুটে ও কুলি;
তোমারে সেবিতে যার পবিত্র অঙ্গে লাগায় ধূলি;
তারাই মানুষ, তারাই দেবতা গাহি তাহাদেরি গান,
তাদের ব্যাথিত বক্ষে পা পেলে আসে নব উত্থান!
সারমর্ম:
শ্রমজীবী মানূষের কঠোর শ্রম ও অপরিসীম ত্যাগে গড়ে উঠেছে মানবসভ্যতা।এদিক থেকে শ্রমজীবীরাই সত্যিকারের মহৎ মানুষ।কিন্তু সমাজজীবনে এরা বঞ্চিত,শোষিত,উপেক্ষিত।এখন দিন এসেছে।শ্রমজীবী মিানুষেরাই একদিন নবজাগরণের মধ্য দিয়ে বিশ্বে পালাবদলের সূচনা করবে।
৬
পরের মুখে শেখা বুলি পাখির মতো কেন বলিস?
পরের ভঙ্গি নকল করে নটের মত কেন চলিস ?
তোর নিজত্ব সর্বাঙ্গে তোর দিলেন দাত আপন হাতে,
মুছে সেটুকু বাজে হলি,গৌরব কি বাড়ল তাতে?
আপনারে যে ভেঙে চুরে গড়তে চায় পরের ছাঁচে,
অলিক,ফাঁকি,মেকি সে জন নামটা তার কদিন বাঁচে?
পরের চুরি ছেড়ে দিয়ে আপন মাঝে ডুবে যারে,
খাঁটি ধন সেথায় পাবি,আর কোথাও পাবি নারে।
সারমর্ম:
অন্ধ পরানুকরণ মানুষের জন্য মর্যাদাকর নয়।কারণ,তা তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলির সৃজনশীল বিকাশের সম্ভাবনা নষ্ট করে দেয়।বস্তুত,স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী প্রকাশের মাধ্যমেই মানুষ সত্যিকারের মর্যাদা অর্জন করতে পারে ।
৭
পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে
আপনার কথা ভুলিয়া যাও ।
পরের কারণে মরণেও সুখ,
‘সুখ- সুখ করি কেঁদো না আর;
যতই কাঁদিবে যতই ভাবিবে,
ততই বাড়িবে হৃদয়–ভার ।
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিত
আসে নাই কেহ অবনী ’ পরে
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে ।
(১৩)
সারমর্ম :
আত্মস্বার্থে বিভোর না হয়ে পরের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করলে প্রকৃত সুখ মেলে।বস্তুত মানব জীবন ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক নয়;একে অন্যের কল্যাণে ব্রতী হওয়াই মানুষের বৈশিষ্ট্য ।
৮
দৈন্য যদি আসে ,আসুক , লজ্জা কি বা তাহে,
মাথা উঁচু রাখিস।
সুখের সাথি মুখের পানে যদি নাহি চাহে,
ধৈর্য ধরে থাকিস ।
রুদ্র রূপে তীব্র দুঃখ যদি আসে নেমে ,
বুক ফুলিয়ে দাঁড়াস,
আকাশ যদি বজ্র নিয়ে মাথায় ভেঙে পড়ে
ঊর্ধ্বে দু হাত বাড়াস ।
সারমর্মঃ
ধৈর্য ও সাহস নিয়ে মানুষকে জীবনের ঘাত- প্রতিঘাতময় সময় অতিক্রম করতে হয় । দুঃথ ও দৈন্যের সঙ্গে লড়াই না করে এবং বিপদকে মোকাবেলা না করে জীবনে সাফল্য অর্জিত হয় না ।
৯
সবারে বাস রে ভাল
নইলে জীবনের কালো মুছবে না রে !
আজ তোর যাহা ভালো
ফুলের মতো দে সবারে ।
করি তুই আপন আপন,
হারালি যেটি ছিল আপন
বিলিয়ে দে তুই যারে তারে ।
যারে তুই ভাবিস ফণী
তারো মাথায় আছে মণি
বাজা তো প্রেমের বাঁশি
ভবের মনে ভয় বা কারে ?
সবাই যে তোর মায়ের ছেলে
রাখবি কারে,কারে ফেলে ?
একই নায়ে সকল ভয়ে
যেতে হবে রে ওপারে ।
সারমর্ম :
কেবল নিজেকে নিয়ে বিভোর থাকলে,অন্যকে দূরে ঠেললে মানূষ হয়ে পড়ে নিঃসঙ্গ। জীবনকে স্বার্থক ও মহীয়ান করতে হলে মানুষে মানুষে চাই প্রীতি ও প্রেমের মেলবন্ধন ।
(১৪)
১০
ধন্য আশা কুহকিনী!তোমার মায়ায়
অসার সংসারে চক্র ঘোরে নিরবধি ;
দাঁড়াইত স্থির ভাবে চলিত না, হায়
মন্ত্রবলে তুমি চক্র না ঘুরিত যদি।
ভবিষ্যৎ অন্ধ মূঢ় মানব সকল
ঘুরিতেছে কর্ম ক্ষেত্রে বর্তুল–আকার ;
তবে ইন্দ্রজালে মুগ্ধ, পেয়ে তব বল
যুঝিছে জীবনযুদ্ধে হায় অনিবার ।
নাচায় পুতুল যেমন দক্ষ বাজিকরে,
নাচাও তেমনি তুমি অর্বাচীন নরে ।
সারমর্ম :
আশাই মানুষের জীবন সংগ্রামের প্রণোদনা।আশাহীন জীবন হয়ে পড়ে স্হবির ও নিশ্চল । আশার জাদুতেআ মানুষ জীবনের সংকট ও প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে; মঙ্গল সমৃদ্ধির আশায় কাজ করে যায় সারা জীবন ।
১১
“বসুমতী,কেন তুমি এতই কৃপণা?
কত থোঁড়াখুঁড়ি করি পাই শস্যকণা।
দিতে যদি হয় দে মা , প্রসন্ন সাহস
কেন এত মাথার ঘাম পায়েতে বহাস ?’’
শুনিয়া ঈষৎ হাসি কন বসুমতি ,
‘‘আমার গৌরব তাতে সামান্যই বাড়ে;
তোমার গৌরব তাতে একেবারে ছাড়ে।’’
সারমর্ম:
ধরণীর শস্যসম্পদ অনায়াস লভ্য নয়।তাই মানুষের শক্তি সামর্থ্য ও শ্রমের এত মূল্য । অন্যের করুণা নির্ভরতা মানুষ মর্যাদা পায় না।পরিশ্রমই মানুষের অস্তিত্বের অবলম্বন এবং মর্যাদার কষ্টিপাথর।
১২
নিন্দুকের বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো ,
যুগ জনমের বন্ধু আমার, আাঁধার ঘরের আলো ।
সবাই মোরে ছাড়াতে পারে বন্ধু যার আছে ,
নিন্দুক সে ছায়ার মত থাকবে পাছে পাছে ।
বিশ্বজনে নি:স্ব করে পবিত্রতা আনে ,
সাধক জনে বিস্তারিত তার মত করে জানে?
বিনা মূল্যে ময়লা ধুয়ে করে পরিষ্কার ,
বিশ্বমাঝে এমন দয়াল মিলবে কোথায় আর ?
নিন্দুক সে বেঁচে থাকুক বিশ্বহিতের তরে,
আমার আশা পূর্ন হবে তাহার কৃপাভরে ।
সারমর্ম:
নিন্দুকের করা সমালোচনা আমাদের সবার জন্য মঙ্গলজনক । এতে আমরা আমাদের ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানাতে পারি ।নিন্দুক সমালোচনার মাধ্যমে ত্রুটি নির্দেশ করে পরোক্ষভাবে ব্যক্তি ও সমাজের উপকার করে থাকে ।
(১৫)
১৩
সার্থক জন্ম আমার জন্মেছি এই দেশে ।
সার্থক জনম মাগো তোমায় ভালোবেসে
জানি নো তোর ধন-রতন আছে কিনা রানীর মতোন,
শুধু জানি আমার অঙ্গ জুড়ায় তোমার ছায়ায় এ
কোন্ বনেতে জানি নে ফুল গন্ধে এমন করে অকুল,
কোন্ গগনে ওঠে রে চাঁদ এমন হাসি হেসে
আাঁখি মেলে তোমার আলো প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ওই আলোতে নয়ন মেলে মুদিব নয়ন শেষে
সারমর্মঃ
জন্মভূমির প্রতি মানাষের ঋণ অপরিসীম । জন্মভুমির আলো –বাতাস, গাছপালা, মাটিও পরিবেশ মানুষের জীবনের জিয়নকাঠি।তাই জন্মভূমিকে ভালোবাসতে পারলে এবং জন্মভূমির মাটিতে শেষ আশ্রয় পেলে জীবন সার্থক হয়।
১৪
হউস সে মহাজ্ঞানী মহা ধনবান ,
অসীম ক্ষমতা তার অতুল সম্মান ,
হউক বিভর তার সম সিন্ধু জল ,
হউক প্রতিভা তার অক্ষুণ্ণ উজ্জ্বল,
হউক তাতে বাস রম্য হর্ম্য মাঝে,
থাকুক সে মণিময় মহামূল্য সাজে,
হউক তাহার রূপ চন্দ্রের উপম,
হউক বীরেন্দ্র সেই যেন সে রোস্তম,
শত শত দাস তার সেবুক চরণ,
করুক স্তবকদল স্তব সংকীর্তন ।
কিন্তু যে সাবেধি কভু জন্মভূমি হিত ,
স্বজাতির সেবা যেবা করেনি কিঞ্চিৎ,
জানাও সে নরাধমে জানাও সত্বর,
অতীত ঘৃণিত সেই পাষন্ড বর্বর ।
সারমর্ম:
স্বদেশ ও স্বজাতির সেবার মাধ্যমে মানবজীবন হয়ে উঠে মহৎ।জ্ঞান ও বিত্ত, প্রতিভা ও শক্তি, সম্পদ ও বিলাসিতার জোরে মানুষ নিজেক গৌরবান্বিত করতে পারে ।কিন্তু দেশপ্রেম– বিবর্জিত মানুষের কোন সম্মান ও মর্যাদা নেই ।দেশ ও জাতির ঘৃণাই তার প্রাপ্য।
(১৬)
১৫
দন্ডিতের সাথে
দন্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে
সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার ।যার তরে প্রাণ
ব্যথা নাহি পায় কোনো,তারে দন্ড দান
প্রবলের অত্যাচার ।যে দন্ড বেদনা
পুত্রেরে পার না দিতে,সে কারেও দিও না ।
সে তোমার পুত্র নহে, তার ও পিতা আছে
মহা অপরাধী হবে তুমি তার কাছে ।
সারমর্ম :
অপরাধীর প্রতি সহানুভূতিশীল বিচারই আদর্শ বিচার ।অপরাধকে গর্হিত চিহ্নিত করে অপরাধীকে মমতার চোখে দেখে সংশোধনমুখী করাই প্রকৃত বিচারকের দায়িত্ব ।
১৬
আজকের দুনিয়াটা আশ্চাযভাবে অর্থ বা বিত্তের উপর নির্ভরশীল ।লাভ ও লোভের দুর্নিবার গতি কেবল আগে যাবার নেশায় লক্ষহীন প্রচন্ড বেগে শুধু আত্মবিনাশের পথে এগিয়ে চলেছে । মানুষ যদি এই মূঢ়তাকে জয় করতে না পারে , তবে মনুষ্যত্ব কথাটাই লোপ পেয়ে যাবে।মানুষের জীবন আজ এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যেখান থেকে আজ হয়তো নামবার উপায় নেই , এবার উঠবার সিঁড়ি না খুঁজলেই নয় । উঠবার সিড়িঁটা না খুঁজে পেলে আমাদের আত্মবিনাশ যে অনিবার্য তাতে আর কোন সন্দেহ থাকে না ।
সারাংশঃ
অর্থ সম্পদের নেশা একালে মানুষকে এক চরম অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে । এ থেকে পরিত্রাণ না পেলে মানুষের মনুষ্যত্বই লোপ পেয়ে যাবে ।
১৭
মানুষের জীবনকে একটি দোতলা ঘরের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে । জীবসত্তা সেই ঘরের নিচের তলা , আর মানবসত্তা বা মনুষ্যত্ব ওপরের তলা । জীবসত্তার ঘর থেকে মানবসত্তার ঘরে উঠবার মই হচ্ছে শিক্ষা । শিক্ষাই আমাদের মানবসত্তার ঘরে নিয়ে যেতে পারে ।অবশ্য জীবসত্তার ঘরে ও সে কাজ করে ;ক্ষুৎপিপাসার ব্যাপারটি মানবিক করে তোলা তার অন্যতম কাজ ।কিন্তু তার আসল কাজ হচ্ছে মানুষকে মনুষ্যত্বলোকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া।অন্য কথায় শিক্ষার যেমন প্রয়োজনের দিক আছে,তেমনি অপ্রয়োজনের দিক ও আছে,আর অপ্রয়োজনের দিকই তার শ্রেষ্ঠ দিক। সে শেখায় কী করে জীবনকে উপভোগ করতে হয়,কী করে মনের মালিক হয়ে অনুভূতি ও কল্পনার রস আস্বাদন করা যায় ।
সারাংশঃ
অন্য সব প্রাণীর মতো জৈবিক বৈশিষ্ট্যের অধীকারী হলেও মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মূলে রয়েছে তার মনুষত্ব ।এই মনুষ্যত্ব অর্জনে প্রধান ভুমিকা রাখে শিক্ষা । শিক্ষাই তার অন্তরকে আলোকিত করে ,তার মধ্যে জীবনরস সঞ্চার করে।শিক্ষার গুণেই মানুষ জীবনকে সুন্দরভাবে উপভোগ করতে শেখে ।
১৮
অতীতকে ভূলে যাও । অতীতের দুশ্চিন্তার ভার অতীতকেই নিতে হবে ।অতীতের কথা ভেবে ভেবে অনকে বোকাই মরেছে । আগামীকালের বোঝা অতীতের বোঝার সঙ্গে মিলে আজকের বোঝা সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায়। ভবিষ্যৎকে ও অতীতের মত দৃঢ়ভাবে দূরে সরিয়ে দাও।আজই তো ভবিষ্যৎ।ভবিষ্যৎকাল বলে কিছু নেই ।মানুষের মুক্তির দিন তো আজই।আজই ভবিষ্যতের কথা ভাবতে বসে সে ভোগে শক্তিহীনতায় ,মানসিক দুশ্চিন্তায় ও স্নায়বিক দুর্বলতায় । অতএব , অতীতের এবং ভবিষ্যতের দরজায় আগল লাগাও আর শুরু কর দৈনিক জীবন নিয়ে বাঁচতে।
(১৭)
সারাংশ :
অতীতের ব্যর্থতার জন্য আক্ষেপ করে কিংবা ভবিষ্যতের সাফল্যের স্বপ্নে বিভোর হয়ে বর্তমানকে উপেক্ষা করা উচিত নয় । বরং বর্তমানকে কাজে লাগানো উচিত সবচেয়ে বেশি । কারণ বর্তমানের কাজের মধ্যেই নিহিত মানুষের ভবিষ্যৎ সুখ ও সমৃদ্ধি ।
১৯
জাতিকে শক্তিশালী ,শ্রেষ্ঠ,ধনসম্পদশালী, উন্নত ও সুখী করতে হলে শিক্ষা ও জ্ঞান বর্ষার বারিপাতের মতো সর্বসাধারণের মধ্যে সমভাবে বিতরণ করতে হবে।দেশে সরল ও সহজ ভাষায় নানা প্রকারের পুস্তক প্রচার করলে এই কাজ সিদ্ধ হয় ।শক্তিশালী দৃষ্টিসম্পন্ন মহাপুরুষদের লেখনীর প্রভাবে একটা জাতির মানসিক ও পার্থিব অবস্হার পরিবর্তন অপেক্ষাকৃত সল্প সময়ে সাধিত হয়ে থাকে । দেশের প্রত্যেক মানুষ তার ভুল ও কুসংস্হার,অন্ধতা ও জড়তা,হীনতা ও সংকীর্ণতাকে পরিহার করে একটা বিনয়–মহিমোজ্জ্বল উচ্চজীবনের ধারণা করতে শেখে ;মনুষত্ব ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করাই ধর্ম মনে করে ;আত্মমর্যাদা – জ্ঞানসম্পন্ন হয় এবং গভীর দৃষ্টি লাভ করে ।তারপর বিরাট জাতির বিরাট দেহে শক্তি জেগে উঠে ।
সারাংশ :
জাতির সর্বাঙ্গীন বিকাশের উপায় হল সবার মধ্যে শিক্ষার প্রসার ।সহজ- সরল ভাষায় লেখা বই জ্ঞান –বিজ্ঞান চর্চায় সহায়ক ।মহৎ লেখকরাই পারেন জাতিকে কুসংস্কার করে ,মহৎ জীবনে ব্রতী করতে।এভাবে জাতি আত্নশক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠে ।
২০
মানুষের মুল্য কোথায় ? চরিত্র, মনূষত্ব,জ্ঞানও কর্মে ।বস্তুত চরিত্রবলেই মানুষের জীবনে যা–কিছু শ্রেষ্ঠ তা বুঝতে হবে।চরিত্র ছাড়া মানুষের গৌরব করার আর কিছুই নেই।মানুষের শ্রদ্ধা যদি মনিুষের প্রাপ্য হয় ,সে শুধু চরিত্রের জন্।অন্য কোন কারণে মানুষের মাথা মানূষের সামনে নত হবার দরকার নেই ।
জগতে যে -সকল মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন ;তাদের গৌরবের মুলে এই চরিত্রশক্তি।তুমি চরিত্রবান লোক ।এ কথার অর্থ এই নয় যে , তুমি শুধু লম্পট নও,তুমি সত্যবাদী, বিনয়ী এবং জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ কর ; তুমি পরদুঃখকাতর , ন্যায়বান এবং মানুষের ন্যায় স্বাধীনতাপ্রিয়।চরিত্রবান মানে এই।
সারাংশ :
চরিত্র, মনুষত্ব, জ্ঞান ও কর্মের উপর নির্ভর করে মানুষের মর্যাদা। এসবের মধ্যে চরিত্রই মানুষের সবচাইতে মূল্যবান সম্পদ।চরিত্রগুণেই মানুষ শ্রদ্ধা অর্জন করে।যিনি সত্যবাদী,বিনয়ী ,জ্ঞানী ,পরোপকারী ,ন্যায়পরায়ণ ,স্বাধীনতাপ্রিয় ও সজ্জন তিনিই চরিত্রবান।
২১
অভ্যাস ভয়ানক জিনিস । একে হঠৎ স্বভাব থেকে তুলে ফেলা কঠিন । মানুষ হবার সাধনাতেও তোমাকে ধীর ও সহিষ্ণু হতে হবে ।সত্যবাদী হতে চাও ?তাহলে ঠিক কর সপ্তাহে একদিন মিথ্যা বলবে না । ছ মাস ধরে এমনি করে নিজে সত্যকথা বলতে অভ্যাস কর । তারপর এক শুভদিনে আর একবার প্রতিজ্ঞা কর, সপ্তাহে তুমি দুদিন মিথ্যা বলবে না।এক বছর পর দেখবে সত্যকথা বলা তোমার কাছে অনেকটা সহজ হয়ে পড়েছে।সাধনা করতে করতে এমন একদিন আসবে যখন ইচ্ছা করলেও মিথ্যা বলতে পারবে না।নিজেকে মানুষ করার চেষ্টায় পাপ ও প্রবৃত্তির সঙ্গে সংগ্রামে তুমি হঠাৎ জয়ী হতে কখন ও ইচ্ছা কোরো না । তাহলে সব পন্ড হবে ।
(১৮)
সারাংশ :
অভ্যাসের দাস না হয়ে ধীরতা ও সহিষ্ণুতার ধারণায় ব্রতী হওয়া উচিত।এটাই মনুষ্যত্ব অর্জনের পথ ।মিথ্যা বলার প্রবণতা দূর করে সত্য বলার অভ্যাস গঠনের জন্য চাই সাধনা । সাধনার মাধ্যমেই মানূষ পাপ ও প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে সফল হতে পারে ।
২২
নিন্দা না থাকিলে পৃথিবীতে জীবনের গৌরব থাকিত না?একটা ভাল কাজে হাত দিলাম,তাহলে নিন্দা কেহ করে না,সেই ভালো কাজের দাম কি?একটা ভালো কিছু লিখিলাম, তাহলে নিন্দুক কেহ নাই,ভালো গ্রন্থের পক্ষে এমন মর্মান্তিক অনাদর কি হতে পারে? জীবনকে ধর্মচর্চায় উৎসর্গ করিলাম,যদি কোন মন্দ লোক তাহার মধ্যে মন্দ অভিপ্রায় না দেথিল,তবে সাধুতা সে নিতান্তই সহজ হইয়া পড়িল । মহত্বকে পদে পদে নিন্দার কাঁটা মাড়াইয়া চলিতে চায়।ইহাতে যে হার মানে,বীরের সঙ্গতি সে লাভ করে না । পৃথিবীতে নিন্দা দোষীকে সংশোধন আছে তাহা নহে,মহত্বকে গৌরব দেওয়া তাহার একটা মস্তকাজ ।
সারাংশ :
নিন্দার মাধ্যমেই ভালো কাজ পায় গৌরবজনক স্বীকৃতি । নিন্দুকের সমালোচনার মাধ্যমেই ভুল- ত্রুটি সংশোথধত হয় । তাই নিন্দার কাছে হার মানলে গৌরবের জয়মাল্য কঠিন হয়ে পড়ে ।
২৩
ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই জ্ঞানীর কাজ।পিঁপড়ে-মৌমাছি পর্যন্ত ভবিষ্যতের জন্য ব্যতিব্যস্ত তখন মানুষের কথা বলাই বাহুল্য।ফকির- সন্ন্যাসী যে ঘর বাড়ি ছেড়ে আহার- নিদ্রা ভুলে পাহাড়-জঙ্গলে চোখ বুজে বসে থাকে ,সেটা যদি নিতান্ত গঞ্ছিকার কৃপায় না হয়,তবে বলতে হবে ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে । সমস্ত জীব জন্তুর দুটি চোখ সমান থাকবার মানে হল ভবিষ্যতের দিকে নজর থাকা । অতীতের ভাবনা ভেবে লাভ নেই।পন্ডিতরা তো বলে গেছেন,‘গতস্যে শোচনা নাস্তি’।আর বর্তমান সে তো নেই বললেই চলে।এই সেটা বর্তমান সেই এই কথা বলতে বলতে অতীত হয়ে গেল।কাজেই তরঙ্গ গোনা আর বর্তমানের চিন্তা করা সমান অনর্থক।ভবিষ্যৎটা হলো আসল জিনিস।সেটা কখনও শেষ হয় না।তাই ভবিষ্যতের মানব কেমন হবে সেটা, সেটা একবার ভেবে দেখা উচিত।
সারাংশ :
চিন্তাশীল মানুষ ভবিষ্যৎ ভেবেই কাজ করেন ।অতীত গত, আর বর্তমান নিতান্তই ক্ষণস্হায়ী । তাই অতীতের জন্য অনুশোচনা করে লাভ নেই । ক্ষণস্হায়ী ভবিষ্যৎ ভেবে বর্তমান কাজের পরিকল্পনা করে অগ্রসর হওয়াই দূরদর্শিতার লক্ষণ ।
২৪
বাল্যকাল হইতেই আমাদের শিক্ষার সহিত আনন্দ নাই ।কেবল যাহা কিছু নিতান্ত আবশ্যক , তাহাই কণ্ঠস্থ করিতেছি।তেমনি করিয়া কোনমতে কাজ চলে মাত্র,কিন্তু মনের বিকাশ লাভ হয় না।হাওয়া খাইলেই ও পেট ভরে না ,আহার করিলেই পেট ভরে, কিন্তু আহারাদি রীতিমত হজম করিবার জন্য হাওয়া আবশ্যক।তেমনি একটি শিক্ষাপুস্তককে রীতিমত হজম করিতে অনেকগুলি অপাঠ্য পুস্তকের সাহায্য আবশ্যক।ইহাতে আনন্দের সহিত পড়িতে পারিবার শক্তি অলক্ষিতভাবে বৃদ্ধি পইতে থাকে।গ্রহণ শক্তি, ধারণা শক্তি,চিন্তাশক্তি বেশ সহজে এবং স্বাভাবিক নিয়মে বললাভ করে।
(১৯)
সারাংশ:
প্রচলিত শিক্ষার একটা সীমাবদ্ধতা হল মুখস্থবিদ্যা।এর সঙ্গে আনন্দের যোগ নেই।ফলে প্রকৃতপক্ষে পাঠ আয়ত্ত হয় না।প্রকৃত শিক্ষার জন্য টেক্সটবুক ছাড়াও চাই পাঠ-সহায়ক আনন্দকর শিক্ষা-উপকরণ । শিক্ষার সহিত আনন্দের যোগে মনের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে ।
২৫
কিসে হয় মর্যাদা ?দামি কাপড়,গাড়ি- ঘোড়া,না ঠাকুর–দাদার কালের উপাধিতে? না,মর্যাদা এসব জিনিসে নেই।আমি দেখতে চাই তোমার ভিতর,তোমার বাহির,তোমার অন্তর।আমি জানতে চাই, তুমি চরিত্রবান কিনা,তুমি সত্যের উপাসক কিনা।তোমার মাথা দিয়ে কুসুমের গন্ধ বেরোয়,তোমায় দেখলে দাস –দাসী দৌড়ে আসে,প্রজারা তোমায় দেখে সন্ত্রস্ত হয়,তুমি মানুষের ঘাড়ে চড়ে হাওয়া খাও, মানুষকে দিয়ে জুতা খোলাও,তুমি দিনের আলোতে মানুষের টাকা আত্নসাৎ কর।বাপ- মা ,শ্বশুর–শাশুড়ি তোমায় আদর করেন,আমি তোমায় অবজ্ঞায় বলব –যাও ।
সারাংশ :
অর্থ-বিত্ত,বংশগরিমা,প্রতাপ-প্রতিপত্তিমানুষকে করে তোলে দাম্ভিক ও অহংকারী।তাতে প্রকৃত মর্যাদা অর্জিত হয় না।চরিত্রবান,সত্যবাদী মানুষ ও জ্ঞানী-গুনীজনরাই মহৎ গুণাবলির শক্তিতে জীবনের প্রকৃত মর্যাদার অধীকারী হন ।
২৬
বর্তমান সভ্যতায় দেখি ,এক জায়গায় একদল মানুষ অন্ন উৎপাদনের চেষ্টায় নিজের সমস্ত শক্তি নিয়োগ করেছে , আর এক জায়গায় আর একদল মানুষ স্বতন্ত্র থেকে সেই অন্নে প্রাণধারণ করে ।চাঁদের এক পিঠে অন্ধকার, অন্য পিঠে আলো – এ সেইরকম । একদিকে দৈন্য মানুষকে পঙ্গু করে রেখেছে অন্যদিকে ধনের সন্ধান , ধনের অভিমান, ভোগবিলাস সাধনার প্রয়াসে মানুষ উন্মত্ত।অন্নের উৎপাদন হয় পল্লীতে, আর অর্থের সংগ্রহ চলে নগরে ।অর্থ উপাজনের সুযোগ ও উপকরণ সেখানেই কেন্দ্রীভূত;স্বভাবতই সেখানে আরাম, আরোগ্য, আমোদও শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠত হয়ে অপেক্ষাকৃত অল্পসংখক লোককে ঐশ্বর্যের আশ্রয় দান করে । পল্লিতে সেই ভোগের উচ্ছিষ্ট যা- কিছু পেীঁছায় তা যৎকিঞ্ছিৎ।
সারাংশ:
বর্তমান সভ্যতায় উৎপাদন ও পরিভোগে বিশাল ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। পল্লির বিপুল জনগন অন্ন উৎপাদন করেও দারিদ্রকবলিত। অথচ নগরের মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগীরা ভোগবিলাসিতায় আচ্ছন্ন। অর্থের কেন্দ্রীভবন নগরকে দিয়েছে নানা নাগরিক সুবিধা। পক্ষান্তরে, পল্লি সুবিধাবঞ্চিত ও অন্ধকারে নিমজ্জিত।
২৭
শ্রমকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ কর।কালি- ধুলার মাঝে, রৌদ্র –বৃষ্টিতে কাজের ডাকে নেমে যাও । বাবু হয়ে ছায়ায় পাখার তলে থাকবার দরকার নেই ।এ হচ্ছে মৃত্যুর আয়োজন।কাজের ভেতরে কুবুদ্ধি কুমতলব মানবচিত্তে বাসা বাঁধতে পারে না।কাজে শরীরে সামর্থ্য জন্মে,স্বাস্থ্য,শক্তি, আনন্দকরার কোনো প্রয়োজন হয় না।শুধু চিন্তার দ্বারা জগতের হিতসাধন হয় না।মানব সমাজে মানুষের সঙ্গে কাজে, রাস্তায়, কারখানায়,মানুষের সঙ্গে ব্যবহারে মানুষ নিজেকে পূর্ণ করে।
(২০)
সারাংশ :
কর্মহীন জীবন মানুষকে নির্জীব ও হীনপ্রবৃত্তিসম্পন্ন করে তোলে।বস্তূত,পরিশ্রমের মাধ্যমেই মানুষ পায় স্বাস্থ্যময় জীবন ও পরিচ্ছন্ন মন,হয়ে উঠে র্পূর্ণাঙ্গ মানুষ।কর্মসূত্রেই মানুষ সৌজন্য শেখে, লাভ করে কাজের ও অবকাশের আনন্দ,অবদান রাখে জগতের কল্যাণে।
২৮
মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণী।জগতের অন্যান্য প্রাণীর সহিত মানুষের পার্থক্যের কারণ মানুষ বিবেক ও বুদ্ধির অধিকারী।এই বিবেক,বুদ্ধি ও জ্ঞান নাই বলিয়া আর সকল প্রাণী মানুষ অপেক্ষা নিকৃষ্ট।জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের উৎকর্ষ সাধন করিয়া মানুষ জগতের বুকে অক্ষয় কীর্তি স্থাপন করিয়াছে,জগতে কল্যাণ করিতেছে।পশুবল ও অর্থবল মানুষকে বড় বা মহৎ করিতে পারে না।মানুষ বড় হয় জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের বিকাশে।জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের প্রকৃত বিকাশে জাতির জীবন উন্নত হয়।প্রকৃত মানুষ জাতির জীবনের প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন আনয়নে সক্ষম।
সারাংশ:
জ্ঞান,বুদ্ধি ও বিবেকের অধিকারী বলে মানুষ সৃষ্টির সেরা প্রাণী।পাশব শক্তি ও বিত্তের দাপট মানুষের মহিমার পরিচায়ক নয় । বরং ঞ্জান ও মনুষ্যত্বের পরিপূর্ণ বিকাশের মাধ্যমে মানুষ হয়ে উঠে যথার্থ মানুষ ।এ ধরনের মানুষের অবদানেই অর্জিত হয় জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতি।
২৯
জাতি শুধু বাইরের ঐশ্বর্যসম্ভার,দালানকোঠার সংখ্যাবৃদ্ধি কিংবা সামরিক শক্তির অপারেজয়তায় বড় হয় না,বড় হয় অন্তরের শক্তিতে,নৈতিক চেতনায়,আর জীবন পুর্ণ করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ক্ষমতায়।জীবনের মূল্যবোধ ছাড়া জাতীয় সত্তার ভিত কখনো শক্ত আর দুর্মূল্য হতে পারে না।মূল্যবোধ জীবনাশ্রয়ী হয়ে জাতির সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়লেই তবে জাতি অর্জন করে মহত্ব আর মহৎ কর্মের যোগ্যতা।সবরকম মূল্যবোধের বৃহত্তম বাহন ভাষা,তথা মাতৃভাষা,আর তা ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব লেখক আর সাহিত্যিকদের।
সারাংশঃ
জাতির অগ্রগতির মাপকাঠি বাইরের আড়ম্বর নয়,অন্তরে&a