প্রবন্ধ রচনা কি এবং লেখার নিয়ম

রচনা প্রবন্ধ বলতে কি বোঝায় এবং এটা কিভাবে লিখতে হয় তা নিচে বর্ণনা করা হলো।

রচনা বলতে প্রবন্ধ রচনাকে বোঝায়।

'রচনা' শব্দের অর্থ কোনোকিছু নির্মাণ বা সৃষ্টি করা। কোনো বিশেষ ভাব বা তত্বকে ভাষার মাধ্যমে পরিস্ফুট করে তোলার নামই রচনা। রচনাকে সাধারণত সৃষ্টিশীল কর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে বিষয়ের উপস্থাপনা, চিন্তার ধারাবাহিকতা, সংযত বর্ণনা, ভাষার প্রাঞ্জলতা ও যুক্তির সুশৃঙ্খল প্রয়োগ থাকে৷ লেখকের চিন্তা, কল্পনা ও বুদ্ধির মিলিত প্রয়াসে রচনা উৎকৃষ্ট হয়ে ওঠে ৷ 'প্রবন্ধ' শব্দের প্রকৃত অর্থ প্রকৃষ্ট রূপে বন্ধন । "প্রকৃষ্ট বন্ধন' বলতে বিষয়বস্তু ও চিন্তার ধারাবাহিক বন্ধনকে বোঝায়। নাতিদীর্ঘ, সুবিন্যস্ত গদ্য রচনাকেই প্রবন্ধ বলে। প্রবন্ধ রচনায় বিষয়, ভাব, ভাষা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ।  

শিক্ষার্থীদের বেলায় রচনা ও প্রবন্ধ কথাটি সমার্থক ৷ শিক্ষার্থীদের রচনায় নতুন কোনো ভাব বা তত্ব থাকে না। একটা নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা মনের ভাব বা বন্ব্যকে প্রকাশ করে। রচনা বা প্রবন্ধ লেখার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী কোনো বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা ব্যক্ত করতে পারে । এতে তার বস্তব্যকে গুছিয়ে বলার দক্ষতা জন্মে । কোনো বিষয় সম্পর্কে স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রচনা লেখার মধ্য দিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীর ভাষা ব্যবহারেরও দক্ষতা মজবুত হয় ৷ শিক্ষার্থীদের বন্তব্যকে সুস্স্ট করার জন্য যথার্থ শব্দ প্রয়োগ এবং উপমা, অলংকার ইত্যাদি ব্যবহার সম্পর্কেও সচেতন হয়ে ওঠে । মনের ভাব প্রকাশের জড়তা কাটিয়ে ওঠা ও ভাষাগত দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রবন্ধ-রচনার অনুশীলন প্রয়োজন এ ছাড়া শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত আবেগ, অনুভূতি, অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিত্বের স্বাধীন প্রকাশের জন্য প্রবন্ধ-রচনা অনুশীলনের বিকল্প কিছু নেই। 

 রচনার বিভিন্ন অংশ:

 রচনার প্রধান অংশ তিনটি -_ 

ক. ভূমিকা, 

খ. বিষয়বস্তু, 

গ. উপসংহার ৷ 

ক. ভূমিকা : এটি রচনার প্রবেশপথ ৷ একে সূচনা, প্রারম্ভ্কা বা প্রাক-কথনও বলা চলে।৷ এতে যে বিষয়ে রচনা লেখা হবে, তার আভাস এবং সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ভূমিকা সংক্ষিপ্ত হওয়াই উচিত।  

খ. বিষয়বস্তু বা মূল বক্তব্য : বিষয়বস্তু অথবা মূল বক্তব্যই হচ্ছে রচনার প্রধান অংশ । এ অংশে রচনার মূল বিষয়বস্তুর সামগ্রিক পরিচয় স্পষ্ট করতে হয়। বিষয় বা ভাবকে পরিপূর্ণ করার জন্য প্রয়োজনে ছোট ছোট অনুচ্ছেদ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে লক্ষ রাখতে হবে, অনুচ্ছেদগুলোর ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে। বক্তব্যকে স্পষ্ট করার জন্য এ অংশে প্রয়োজনে উদাহরণ, উপমা, উপ্ধৃতি ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।

গ. উপসংহার : প্রবন্ধের সকল বিষয়বস্তু আলোচনার পর উপসংহার অংশে আলোচ্য রচনাটির একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো প্রয়োজন হয় এই অংশে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি বলে এটাকে “উপসংহার' নামে অভিহিত করা হয়। আলোচ্য প্রবন্ধে বর্ণিত বিষয়ে লেখকের নিজস্ব মতামত সারসংক্ষেপ তুলে ধরে এই উপসংহারের মধ্যে। 

রচনার শ্রেণিবিভাগ : 

সকল প্রবন্ধের ‌বিষয়বস্তু অনুসারে আমারা রচনাকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় : ক. বর্ণনামূলক রচনা, খ. চিন্তামূলক রচনা । বর্ণনামূলক রচনা সাধারণত স্থান, কাল, বস্তু, ব্যক্তিগত স্মৃতি-অনুভূতি ইত্যাদি বিষয়ে হয়ে থাকে। ধান, পাট, শরৎকাল, কাগজ, টেলিভিশন, বনভোজন, শৈশবস্মৃতি ইত্যাদি রচনা এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ৷ চিন্তামূলক রচনায় থাকে সাধারণত তত্ত্ব, তথ্য, ধ্যান-ধারণা, চেতনা ইত্যাদি ৷ শ্রমের মর্যাদা, বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার, পরিবেশদূষণ, অধ্যবসায়, সত্যবাদিতা, চরিত্রগঠন প্রভৃতি এই শ্রেণির রচনার মধ্যে পড়ে৷ 

প্রবন্ধ-রচনার কৌশল:  

১. বর্ণনার মধ্য দিয়ে দৃষ্ি, রং, ধ্বনি, স্বাদ, গন্ধ, অনুভূতি ব্যবহার করে বিষয়বস্তুকে ছবির মতো ফুটিয়ে তুলতে হয়।  

২. বর্ণনামূলক রচনা লেখার সময় তোমাকে প্রবন্ধের সময়সীমা এবং পরিসরের কথা মনে রেখে বিশেষ কিছু দিক বেছে নিতে হয়। সেগুলির সাহায্যে মূল বিষয়বস্তু গুলো সংক্ষেপে উপস্থাপন করতে হয়।  

৩. রচনা লেখার সময় তোমাকে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে ৷ তোমার চিন্তাগুলো যেন এলোমেলো না হয় সেদিকে খুব খেয়াল রাখা দরকার। তোমার অনেক সময় অজানা অনেক বিষয়ে রচনা লিখতে হতে পারে। প্রবন্ধের বিষয়ের ধারণাগুলো একটির পর একটি এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে ভাবের কোনো অসংগতি না থাকে।  

৪. শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে রচনার আকার সাধারণত নির্দিষ্ট পরিসরের হয়ে থাকে৷ পরিমিত পরিসরে তাই রচনার সামগ্রিক বিষয়কে তুলে ধরতে হয়। অযথা বিষয়কে প্রলম্বিত করা ঠিক নয়। তপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক বাক্য লেখা থেকে বিরত থাকতে হয়। এক কথায় রচনা খুব ছোট বা খুব বড় হওয়া উচিত ন্য়।  

৫. প্রবন্ধের ভাষা সহজ এবং প্রাঞ্জল হওয়া বাঞ্ছনীয় । সন্ধি, সমাসবদ্ধ পদ, অপরিচিত বা অপ্রচলিত শব্দ যথাসম্চ্ব পরিহার করা ভালো । বাগাড়ম্বর বা অলংকারবহুল শব্দ ব্যবহার করা হলে অনেক সময় 'বিষয়টি জটিল ও দুর্বোধ্য হয়ে পড়ে। সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষারীতির মাধ্যমে রচনাকে যথাসম্চ্ব 'রসমডিত ও হৃদয়গ্রাহী করার চেষ্ণা করতে হয়।  

প্রবন্ধ রচনায় দক্ষতা অর্জনের উপায়:  

প্রবন্ধ রচনায় রাতারাতি দক্ষতা অর্জন করা সম্ভ্ব নয়। এর জন্য নিয়মিত অনুশীলন দরকার । এ ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত দিকগুলো সহায়ক হতে পারে :

  ১. প্রথমে প্রবন্ধ রচনা লিখতে হলে তোমাকে আগে অনেক অনেক রচনা প্রবন্ধ পড়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধগুলো পড়তে পারো, সংবাদ, প্রতিবেদন, ফিচার ইত্যাদি নিয়মিত পাঠ করলে তোমার নানা বিষয়ে ধারণা জন্মায় এবং শব্দভাডার বৃদ্ধি পায়। এতে লেখা সহজ হয়ে ওঠে।  

২. প্রবন্ধের বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার প্রবল্ধের মর্মবস্তু, যুক্তি, তথ্য, তত্ত্ব, বিচার- বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়ানুগ, প্রাসঙ্গিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া চাই। একই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার।  

৩. রচনাটি ভাষারীতিতে সাধু ও চলিত ভাষা যেন মিশে না যায় সে ব্যাপারে তোমাকে সতর্ক থাকতে হবে। অযথা ও অপ্রাসঙ্গিক কোন তথ্য প্রবন্ধের মধ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়।  

৪. প্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত ছাড়াও নিজের বস্তব্যকে আরো জোরালো করার জন্য প্রবাদ-প্রবচন, কবিতার পড়ক্তি, উদ্ধৃতি ইত্যাদি সরিবেশ করা চলে।  

৫. নিজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা, চিন্তাশক্তি, পঠন-পাঠন, ভাষাগত দক্ষতা ও উপস্থাপনা কৌশল ইত্যাদি প্রয়োগ করে প্রবন্ধকে যথাসম্ত্ব হৃদয়গ্রাহী করার চেষ্ণা করা উচিত।


Jakaria Daria

11 Blog posts

Comments