বাগধারা অর্থ কি এবং কাকে বলে ?

বাংলা ভাষায় বাগধারা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, চলুন নিচে এই সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।

বাক্য অথবা বাক্যাংশের বিশেষ প্রকাশভঙ্গিকেই বলা হয় বাগধারা। বিশেষ কোন প্রসঙ্গে শব্দের  বিশিষ্টার্থক প্রয়োগের জন্য বাংলায় বহু বাগধারা তৈরি হয়েছে। এ ধরনের প্রয়োগের পদগুচ্ছ অথবা বাক্যাংশ আভিধানিক অর্থ ছাপিয়ে বিশেষ অর্থের জন্য দ্যোতক হয়ে ওঠে ৷ যেমন: 'অন্ধকারে ঢিল ছোড়া' কথাটা দিয়ে বোঝানো হয় আন্দাজে কিছু করা' ৷ এর সঙ্গে অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার বাস্তব কোনো সম্পর্ক নেই।

যে পদগুচ্ছ অথবা বাক্যাংশ বিশিষ্টার্থক প্রয়োগের ফলে আভিধানিক অর্থের বাইরে অন্য কোন আলাদা অর্থ প্রকাশ করে, 'তাকে বলা হয় বাগধারা।

বাগধারার সাহায্যে আমরা ভাষাকে সংক্ষিপ্ত করি৷ ভাবের ইঙ্গিতময় প্রকাশ ঘটিয়ে বক্তব্যকে রসমধুর করে উপস্থাপনের অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে বাগধারার৷ বাগ্ধারার মাধ্যমে সমাজের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা সূক্ষ্ম ব্যঞ্জনায় উদ্ভাসিত হয়। এদিক থেকে বাগধারা বাংলা সাহিত্যের বিশেষ সম্পদ ৷

এছাড়াও বাগধারা গঠনে জন্য বিভিন্ন শব্দের ব্যবহারকে শব্দের রীতিসিদ্ধ প্রয়োগও বলা হয়ে থাকে। একে বাগবিধিও বলা হয়ে।

বাক্যে বাগধারা প্রয়োগের উদাহরণ :

অ ________________________

অকাল কুষ্মান্ড =(অকেজো): তুমি একটা অকাল কুষ্মান্ড এখনো পর্যন্ত কাজটি শেষ করতে পারেনি।

অকালপক্ব = (ইচড়ে পাকা): এমন অকালপক্ব ছেলের জন্য ওর বাবা-মার অনেক বিপদ আছে।

অকূল পাথার =(মহাবিপদ): রনির বাবা মারা যাওয়ার পর তার পরিবার অকূল পাথারে পড়েছে ।

'অক্কা পাওয়া =(মরে যাওয়া): যে কোনো দিনই থুথুড়ে বুড়ো দাদু অক্কা পেতে পারে৷

অগাধ জলের মাছ = (সুচতুর ব্যক্তি): আমাদের উকিল টা অগাধ জলের মাছ তার সাথে পাল্লা দেওয়া কঠিন ।

অগ্নিপরীক্ষা = (কঠিন পরীক্ষা): পাকিস্তানের শুয়াইব আক্তারের বল খেলা যেন প্রতিটা ক্রিকেটারের কাছে অগ্নিপরীক্ষা।

অগ্নিশর্মা = (খুবই রাগান্বিত): চাচাতো ভাইয়ের বেয়াদবি দেখে চাচা রেগে অগ্নিশর্মা হলেন।

অদৃষ্টের পরিহাস = (ভাগ্যবিড়ম্বনা): অদৃষ্টের পরিহাসে করনে ঢাকার বাড়িটা বিক্রি করতে হয়েছে।

অনধিকার চর্চা = (অজানা বিষয়ে হস্তক্ষেপ): আমি দিনমজুরি করে খাই, লেখাপড়ার আলোচনা আমার কাছে 'অনধিকার চর্চা।

অনুরোধে ঢেঁকি গেলা = (অনুরোধে কষ্ট স্বীকার): লোকের অনুরোধে অনেক ঢেঁকি গিলেছি, এখন আর সহ্য করতে পারছি না।

অন্ধের যষ্টি/নড়ি = (অক্ষম লোকের একমাত্র অবলম্বন):  বুড়ো লোকটির একমাত্র ছেলে টি অন্ধের যষ্টি।

অন্ধকার দেখা = (বিপদে সমাধানের উপায় না দেখা): বন্যায় ঘর বাড়ি ভেসে যাওয়ায় লোকটা চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলো।

অন্ধকারে চিল ছোড়া = (আন্দাজে কিছু করা): অন্ধকারে ঢিল না ছুড়ে আসল ঘটনাটা জেনে এসো তারপর কথা বল।

অমাবস্যার চাঁদ = (দূর্লভ বাক্তি বা বস্তু): বন্ধু তুমি দেখছি অমাবস্যার চাঁদ হয়ে উঠেছো তোমার দেখাই মিলছে না। 

অরণ্যে রোদন = (নিষ্ফল অনুনয়): লোকটা হাড় কিপটে, ওর কাছে কিছু চাওয়া আর অরণ্যে রোদন একই কথা।

অর্ধচন্দ্র = (গলা ধাক্কা): দারোয়ান উটকো বাজে লোকটাকে অর্থচন্দ্র দিয়ে বের করে দিল।

আ __________

আকাশকুসুম =  (অবাস্তব ভাবনা): বর্তমান সময়ে সরকারি চাকরি পাওয়াটা অনেকের জন্যই এখন আকাশকুসুম ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আকাশ থেকে পড়া = (স্তম্ভিত হওয়া): লটারিতে 40 লক্ষ টাকা পেয়ে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম।

আকাশ-পাতাল = (সীমাহীন): শহরের জীবনযাত্রা ও গ্রামের জীবনযাত্রা এখনও আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে।

আকাশ তেঙে পড়া  = (মহাবিপদে পড়া): প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় অনেক পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।

আকাশে তোলা  = (অতিরিত্ত প্রশংসা করা): নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য অনেকে অফিসের বসকে আকাশে তোলে ৷

আকাশের চাঁদ = (দুর্লভ বস্তু): সরকারি চাকরি পেয়ে ভাইয়া যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল।

আক্কেল গুড়ুম = (হতবুদ্ধি অবস্থা): বাচাল ছেলেটার কথাবার্তা শুনে তো আমার আকেল গুড়ুম। 

আক্কেল সেলামি = (বোকামির দণ্ড): প্রতারক লোকটার খপ্পরে পড়ে আমার জীবনের সব টাকাগুলো আক্কেল সেলামি দিতে হলো।

আখের গোছানো = (ভবিষ্যৎ গুছিয়ে নেওয়া): বর্তমানে দুর্নীতিবাজরা আখের গুছিয়ে নিলেও পার পাচ্ছে না।

আঙুল ফুলে কলাগাছ = (হঠাৎ বিত্তবান হওয়া): শেয়ারের ব্যবসায় রফিক সাহেব এখন আঙুল ফুলে কলাগাছ।

আট কপালে = (হতভাগ্য): আট কপালে ছেলেটির ভাগ্যে সরকারি চাকরি জোটা মুশকিল ৷

আঠারো মাসে বছর = (টিলেমি): আমার চাচা সব কাজেই দেরি করেন। সবাই বলেন তার নাকি আঠারো মাসে বছর।

আদাজল খেয়ে লাগা = (উঠে পড়ে লাগা): বৃত্তি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়ার জন্য রনি আদাজল খেয়ে লেগেছে।

আদায় কাচকলায় = (শত্রুভাবাপন্ন): ওদের বাপ চাচারা আদায় কাচকলায় সম্পর্ক, কেউ কাউকে সহ্য করে না।

আবোল-তাবোল = (এলোমেলো কথা): লোকটি আসল ঘটনা লুকোতে গিয়ে আবোল-তাবোল বকে চলেছে।

আমড়া কাঠের ঢেঁকি = (অকেজো লোক): শফিক একটা আমড়া কাঠের ঢেঁকি, ওকে দিয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ হবে না।

আমলে আনা = (গুরুত্ব দেওয়া): পুলিশ চোরের কথা কোনো আমলে আনল না।

আলালের ঘরের দুলাল = (বড় লোকের আদুরে ছেলে): এই আলালের ঘরের দুলালটি শুধু বাবার টাকা নষ্ট করে।

আষাঢ়ে গল্প = (বানানো কথা): সময়মতো কিছুই করতে পারো নাই, তার জন্যে আষাঢ়ে গল্প বলার দরকার কী?

আসমান-জমিন ফারাক = (বিপুল ব্যবধান): গরিবের স্বপ্ন এবং বাস্তবতা আসমান-জমিন ফারাক ৷

আস্তানা গাড়া = (সাময়িকভাবে কোথাও থাকতে শুরু করা): রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে আস্তানা গেড়েছে।

'আহ্লাদে আটখানা = (আনন্দে আত্মহারা): বৃত্তি পরীক্ষায় A+ পেয়ে সে আহ্লাদে আটখানা।

ই _________

ইচড়ে পাকা = (অল্প বয়সেই পেকে গেছে এমন): ইচড়ে পাকা ছেলেটা বিয়ের জন্য তার বাবাকে খুব জ্বালাতন করতেছে।

ইঁদুর কপালে = (মন্দ ভাগ্য): জীবনে এতো কষ্ট করার পরেও সুখের মুখ দেখলাম না, আমি আসলেই একটা ইঁদুর কপালে।

ইতর বিশেষ = (সামান্য পার্থক্য): পরীক্ষার ফলাফলে একই গ্রেড প্রাপ্তদের মধ্যে ইতর বিশেষ করা বড়ই মুশকিল৷ 

উ  _________

উড়নচণ্ডী = (অমিতব্যয়ী): উড়নচণ্ডী মেয়েটাকে নিয়ে বাবা-মা মহাবিপদে পড়েছে।

উঠতে বসতে =(সব সময়): শ্বশুরের কাছ থেকে মোটা অংকের যৌতুকের অর্থ গ্রহন করেছ – এখন উঠতে বসতে গিন্নির খোটা শুনতেই হবে।

উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে =(একজনের অপরাধ অন্যের উপর চাপানো): অসাধু লোকেরা নিজে বাঁচার জন্য বরাবরই উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাতে চায়।

উড়ে এসে জুড়ে বসা = (বিনা অধিকারে এসে সর্বেসর্বা হয়ে বসা): আপনি উড়ে এসে জুড়ে বসে মাতব্বরি শরু করবেন, তা আমরা মানবেন কেন?

উত্তম-মধ্যম = (প্রচণ্ড মার): চোর বেটাকে ধরে উত্তম-মধ্যম দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হলো।

উভয় সংকট =(দু দিকেই বিপদ): স্কুলে না মাদ্রাসায়, কোনটায় ভর্তি হব এ নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছি। 

উলুবনে মুক্তো ছড়ানো = (অপাত্রে মূল্যবান কিছু প্রদান): তোমার মত বোকা লোককে জ্ঞান দেওয়া আর উলুবনে মুস্তো ছড়ানোর মতো। 

ঊ ____________

ঊনপঞ্চশ বায়ু =(পাগলামি): আমার সামনে বিয়ের কথা তুল না, এখনি কিন্তু ঊনপঞ্চাশ বায়ু বেড়ে যাবে বলে দিলাম।

ঊনপাঁজুরে =(হতভাগ্য): মিছিমিছি ঊনপাঁজুরে বলে ছেলেটার মন কেন খারাপ করে দিচ্ছ; দেখবে একদিন সেও ঠিকই সৌভাগ্যের মুখ দেখবে।

এ ___________

এঁটে ওঠা =(সমানে পাল্লা দিতে পারা): ভাই তোমার সঙ্গে এঁটে ওঠা মুশকিল ৷ 

এক কথার মানুষ = (কথা রাখে এমন): আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন, আমি এক কথার মানুষ৷ 

একচোখো = (পক্ষপাতদুষ্ট): একচোখো মাতব্বরের কাছে কখনো সুবিচার আশা করা যায় না। 

এলাহি কান্ড = (বিরাট আয়োজন): শিল্পপতির মেয়ের বিয়ে, এলাহি কাও তো হবেই। 

এক নজরে = (অতি অল্প সময়ের জন্য): তোমাকে এক নজরে দেখার জন্য আমি এত দূর থেকে ছুটে এসেছি।

এক ঢিলে দুই পাখি মারা =(এক সাথে দুই কাজ সমাধা করা):  ঢাকা যাব বেড়াতে বোনের বাসায় সাথে চিড়িয়াখানা  ঘুরে আসব এক ঢিলে দুই পাখি মারব আর কি।

একাদশে বৃহস্পতি =(সুসময়): পরীক্ষায় পাস করতে না করতেই আপনার ছেলেটা সরকারি চাকরি পেয়ে গেল, আপনার তো দেখি একাদশে বৃহস্পতি।

একাই এক শ = (যথেষ্ট সমর্থ): তোমার মত পুঁচকে ছোড়াকে শায়েস্তার জন্য আমি একাই এক শ। 

এসপার ওসপার = (যে-কোনোভাবে মীমাংসা): মামলার ঝামেলাটা আর সহ্য হয় না। এবার এসপার ওসপার করতেই হবে। 

এক মাঘে শীত যায় না = (বিপদ একবার আসে না): বন্ধু বিপদে ছেড়ে চলে গেছো, মনে রেখো এক মাঘে শীত যায় না।

এসপার ওসপার = (মীমাংসা): তোমারা খামাখাই মামলাটাকে এখনও ঝুলিয়ে রেখেছ, এবার একটা এসপার ওসপার করে ফেল।

এক ক্ষুরে মাথা মুড়ানো = (একই প্রকৃতির লোক): নিতাই যেমন বেয়াদব, গোপালও তেমনি- দুজনেই যেন একই ক্ষুরে মাথা মুড়ানো।

এলোপাতাড়ি =(বিশৃঙ্খলভাবে): পাবলিক চোরকে ধরে এলোপাতাড়ি মারতে আরম্ভ করল।

ও _________

ওজন বুঝে চলা = (আত্মসম্মান রক্ষা করা): মামা বয়স তো কম হলো না, এখন একটু ওজন বলতে চলো।

ওষুধ পড়া =(প্রভাপ পড়া): ছেলেটি আগে এমন ছিল না, কে যেন তাকে ওষুধ পড়া দিয়েছ।

ওত পাতা = (সুযোগের অপেক্ষায় থাকা): আসামিকে ধরার জন্য পুলিশ ওত পেতে আছে।

ক ___________

কই মাছের প্রান = (যা সহজে মরে না): কী কই মাছের প্রাণরে বাবা , এত মার খেয়েও চোরটা একটুও কান্না করছে না।

কাঠের পুতুল=(নির্জীব, আসার লোক): অনেকে হঠাৎ বড়লোক হয়ে কাঠের পুতুল হয়ে যান, তার সব কাজ করায় কাজের লোকদের দিয়ে।

কড়ায়গণ্ডায় = (পুরুপুরি): আমাকে একটু সময় দাও, তোমাদের পাওনা টাকা আমি কড়ায়গণ্ডায় বুঝিয়ে দেব ।

কথায় চিড়া ভিজা = (বিনা ব্যয়ে কার্য সিদ্ধি): মামা মিষ্টি কথায় চিড়া ভিজবে না, জলদি টাকা বের করো ।

কথার কথা =(হালকা কথা): আরে রাগান্বিত হবেন না, আমি কথার কথা বলছিলাম ।

কপাল ফেরা = (সৌভাগ্য লাভ): বিদেশে গিয়ে ছেলেটির কপাল ফেরলো।

কাঁচা পয়সা = (অল্প আয়েসে নগদ উপার্জন): জীবনে দুর্নীতি করে তো অনেক কাঁচা পয়সা কামাইছো, এখন থামো।

কাঁঠালের আমসত্ত্ব = (অসম্ভব বস্তু): বাংলায় ১০০ তে ১০০ মার্ক পাওয়া কাঁঠালের আমসত্ত্বের মতো।

কলুর বলদ = (পরাধীন/নির্বিকারে যে পরিশ্রম করে): কলুর বলদের মতো সারাজীবন কাজই করে আসলাম, বিনিময়ে কি পেলাম?

কাছা ঢিলা = (অগোছালো স্বভাবের):  তোমার যেমন কাছা ঢিলা তুমি তো ফোন হারাবেই।

কলির সন্ধ্যা = (কষ্টের সূচনা): এটুকু বিপদ দেখেই ভীত হয়ে গেছো,কেবলতো কলির সন্ধ্যা, সামনে আরো বাকি আছে।

ক-অক্ষর গোমাংস = (বর্ণ পরিচয়হীন মূর্খ): লোকটির অনেক ধন-সম্পদ থাকলে হবে কি, সে একেবারে ক-অক্ষর গোমাংস।

কলমের খোঁচা = (লিখে ক্ষতি করা): সমাজের সুদখোর মহাজনরা অনেক সময় কলমের খোঁচায় হতদরিদ্র কি কৃষকদের সর্বসান্ত করে থাকে।

কলম পেষা = ( একঘেয়ে কেরানির কাজ): বাবা সারা জীবন কলম পেষে জীবনের স্বাদ পেল না।

কাঠ খড় পোড়ানো=(অনেক কষ্ট এবং পরিশ্রম): কাজটি তুমি যতটা সহজ মনে করেছো ততটা সহজ না, এটা শেষ করতে তোমাকে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হবে।

কলকাঠি নাড়া = (গোপনে কু-পরামর্শ দেওয়া): নিতাই তার নিজের বুদ্ধিতে এই কাজ করছে না, কেউ না কেউ তো তার উপর থেকে কলকাঠি নাড়াচ্ছে।

কথা চালা = (রটনা করা): সঠিক সময় কথা চালার কারনে অনেক মিথ্যা খবরও মুখরোচক সংবাদ হয়ে দাঁড়ায়।

কত ধানে কত চাল = (যথার্থ হিসাব-নিকাশ): এখন তো কাম কাজ দেখলে ভয় পাও, যখন সংসারের বোঝাটা ঘাড়ে এসে পড়বে তখন বুখবে কত ধানে কত চাল।

কান পাতলা = (সব কথায় বিশ্বাস করা): তুমি একটা কান পাতলা লোক তোমার সব কথা বিশ্বাস করা যায় না।

কান খাড়া করা = (মনোযোগী হওয়া): নির্বাচনের ফলাফল শোনার জন্য প্রার্থীরা কান খাড়া করে রইল।

কান ভারী করা =(কারো বিরুদ্ধে অসন্তোষ সৃষ্টি): তুমি নাকি আমার বিরুদ্ধে লোকের কানভারী করছ।

কড়ার ভিখারী = (নিঃস্ব ব্যক্তি): খুব শক্তিশালী রাজা বাদশারাও ভাগ্যপরিহাসে একবারে কড়ার ভিখারীতে পরিণত হয়।

কুল কাঠের আগুন = (তীব্র মনঃকষ্ট): ভালোবাসার মানুষকে না পেয়ে তার মনে কুল কাঠের আগুন জ্বলছে।

কুপমন্ডুক = (সংকীর্ণমনালোক): আমাদের বন্ধুবান্ধবের মধ্যে অনেক কুপমন্ডুক আছে।

কেউকেটা = (নিন্দার্থের গণ্যমান্য লোক): তুমি কি এমন কেউকেটা যে তোমার কথা শুনতে হবে!

কেঁচে গন্ডূষ করা = (পুনরায় প্রথম থেকে শুরু করা): একটু ভুলের কারণে হিসেবটা গরমিল হয়ে গেল, আবার কেঁচে গন্ডূষ করতে হবে।

কেঁচো খুঁড়তে সাপ= (সামান্য ঘটনার সূত্রে গুরুতর ঘটনা প্রকাশ): আসামিকে রিমান্ডে নেওয়ার পরে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে এলো।

কোমর বাঁধা = (কাজে উঠে পড়ে লাগা): বিসিএস পরীক্ষায় পাশ করতে রফিক কোমর বেঁধে পড়াশোনা করছো।

খ _____________

খন্ড প্রলয়= (তুমুল কাড): জায়গা জমি ভাগ করারকে কেন্দ্র করে দুই ভাইয়ের মধ্যে একটা খন্ড প্রলয় ঘটে গেছে। 

খয়ের খাঁ= (খোশামোদকারী, চাটুকার): বৃত্তবান লোকেদের চাপে চারপাশে খয়ের খাঁ লোকের ভিড় জমে উঠেছে। 

খুঁটির জোর =(পৃষ্ঠপোষকের সহায়তা): খুঁটির জোর থাকায় ব্যবসায় লস খেয়েও লোকটি আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। 

গ ___________

গড্ডলিকা প্রবাহ =(অন্ধের মতো অনুসরণ): অনেকে সম্পদের মোহে সমাজের অনেকে গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়।

গন্ডারের চামড়া =(অপমান বা তিরস্কার গায়ে লাগায় না এমন): লোকটির বোধ হয় গন্ডারের চামড়া, তাই এত অপমানেও অনুশোচনা নেই। 

গদাই লশকরি চাল =(টিলেমি): এমন গদাই লশকরি চালে চললে কাজটা এ মাসেও শেষ হবে না।

গলগ্রহ =(দায় বা বোঝা): অন্যের গলগ্রহ হয়ে বেঁচে না থেকে নিজের পায়ে দাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত৷

 গাছে তুলে মই কাড়া =(কাজে নামিয়ে সরে পড়া): বড়বাবুর ভরসায় এত বড় কাজে হাতে নিয়েছি। এখন আমাকে গাছে তুলে মই কেড়ে নিচ্ছে ! 

গায়ে পড়া =(অযাচিত ঘনিষ্ঠতা): অমন গায়ে পড়া লোককে প্রশ্রয় দেয়াটা ঠিক হবে না। 

গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানো =(কোনো দায়িতৃ গ্রহণ না করা): ও নেবে দায়িতৃ? গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানোই যে ওর স্বভাব।

গোঁয়ার গোবিন্দ =(নির্বোধ ও একগুঁয়ে লোক): যে কাজটা দিয়েছি ভালোভাবে বুঝে তারপরে শুরু করবে। গোয়ার গোবিন্দের মতো কাজ করলে আমি মানব না। 

গোড়ায় গলদ = (মূলে কিংবা শুরুতে ভুল): সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে গোড়ায় গলদ ছিল বলে এখন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।

গোবর গণেশ = (বোকা, অকর্মণ্য লোক): ছেলেটার না আছে বুদ্ধি, না পারে কোনো কাজ ও একেবারে গোবর গণেশ। 

গোল্লায় যাওয়া = (উচ্ছনে যাওয়া): বাবা মায়ের ভুল সিদ্ধান্তের ফলে ছেলেটির ভবিষ্যৎ আজ গোল্লায় গেল।

ঘ ____________

ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়া =(উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে স্বস্তি): ছেলেটা ঘরে ফিরে আসায় সবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল। 

ঘাস কাটা =(বাজে কাজে সময় নষ্ট করা): সবাই মিলে খেলা দেখতে যাবে আর তুমি ঘরে বসে ঘাস কাটবে?

ঘোড়া রোগ =(উৎকট বাতিক): তোমার ভাত জোটে না পেটে, আর বড়লোকের মেয়ে বিয়ে করবা, তোমার মত গরিবের ঘোড়ারোগ হইছে !

ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া = (ওপরওয়ালাকে এড়িয়ে কাজ হাসিল): ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খেতে যেও না, তাহলেই বিপদে পড়বে।  

ঘোড়ার ডিম =(অস্তিত্বহীন বস্তু): তোমার বাবা তোমাকে টাকা দেবে? ঘোড়ার ডিম দেবে!

চ ____________

চাঁদের হাট =(সুখের সংসার): কবির শহরে বাড়ি করে সন্তানদের নিয়ে চাঁদের হাট বসিয়েছেন। 

চোখে চোখে রাখা =(সতর্ক নজরদারি): ছেলে মেয়ে খুব রাগ করলে তাকে চোখের দিকে রাখতে হবে । 

চোখে ধূলো দেওয়া =(ফাঁকি দেওয়া): আমি দশ বছর যাবত এই কাজ করি, আমার চোখে ধুলো দিতে পারবে না।

চোখের বালি =(চক্ষুশূল; ক্রোধ বা বিরক্তির কারণ): পরিবারের বড় ছেলেটা টাকা পয়সা দেওয়ার পরেও বাবা-মায়ের চোখের বালি ।

ছ ___________

ছিনিমিনি খেলা =(বেহিসাবি খরচ): টাকা নিয়ে কাজ না করে ছিনিমিনি খেলছো। 

ছেঁকে ধরা =(ঘিরে ধরা): চুরি করে পালানোর সময় গ্রামবাসীরা চোরকে ছেঁকে ধরেছে। 

ছেলের হাতের মোয়া (সহজপ্রাপ্য জিনিস): সরকারি চাকরি পাওয়া কি ছেলের হাতের মোয়া, এজন্য পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে হয়।

জ ____________

জগাখিচুড়ি =(অবাঞ্ছিত জটিলতা): তোমার জগাখ্চুড়ি কাজ দেখলে আমার মাথা গরম হয়ে ওঠে৷ 

'জিলিপির প্যাচ =(কুটিল বুদ্ধি): ওর মনে যে এত জিলিপির প্যাচ জানলে ওকে সত্যি কথা বলতাম না।

ঝ ____________

ঝোপ বুঝে কোপ মারা =(সুযোগ বুঝে কাজ করা): ঝোপ বুঝে কোপ মারতে না জানলে ব্যবসায়ে টেকা মুশকিল৷ 

ট __________

টনক নড়া =(চৈতন্য হওয়া): ব্যবসা লাটে উঠতেই তার টনক নড়ল।

ঠ ___________

ঠাট বজায় রাখা =( অভাব লুকানো): অর্থ সম্পদ শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু বংশে গৌরবে এখনও ঠাট বজায় আছে। 

ঠোট কাটা =(স্পষ্টবাদী): আমি ঠোট কাটা লোক বলেই অনেকে আমাকে অপছন্দ করে ৷ 

ড ________

ডুমুরের ফুল =(অদৃশ্য ব্যক্তি বা বস্কু): কী ব্যাপার! তুমি হঠাৎ ডুমুরের ফুল হয়ে উঠলে যে? 

ট _________

টিমে তেতালা =(খুবই মন্থর গতি): এমন টিমে তেতালাভাবে হাঁটলে বাড়ি যেতে অনেক সময় লাগবে। 

ত __________

'তালকানা =(তালজ্ঞান বর্জিত): মিশু একটা তালকানা লোক। ও যে কাজটা সঠিকভাবে করতে পারবো তা আমার বিশ্বাস হয়না।

তাসের ঘর =(ভঙ্গুর): ওদের অহংকার গৌরব তাসের ঘরের মতোই ভেঙে গেছে। 

তামার বিষ =(অর্থের কুপ্রভাব): তামার বিষে থানা পুলিশ হাত করে নিয়েছে।

থ ________

থ বনে যাওয়া (বিস্ময়ে হতবাক হওয়া): লোকটার কাড দেখে সবাই থ বনে গেল।

দ _________

'দা-কুমড়ো =(নিদারুণ শত্রুতা): দুই ভাইয়ের মধ্যে এখন দা- কুমড়ো সম্পর্ক চলছে।

দুধের মাছি =(সুসময়ের বন্ধু): যখন পকেটে টাকা ছিল তখন, অনেক দুধের মাছি আমার আশপাশে ঘোরাফেরা করেছে। 

দুমুখো সাপ= (দু রকম আচরণকারী, ক্ষতিকর লোক): তোমার মত দুমুখো সাপ আমি কখনও দেখিনি, বলেছিলে একরকম আর এখন করেছো অন্যরকম। 

ধ __________

ধরাকে সরা জ্ঞান করা =(অতিরিক্ত দম্ভে কিছুই গ্রাহ্য না করা): বন্ধু সরকারি চাকরি পেয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। 

ন ___________

ননির পুতুল =(অল্প শ্রমে কাতর): এমন ননীর পুতুল ছেলেকে দিয়ে আমি আমার কাজ করাবো না।

নাক গলানো =(অনধিকার চর্চা): না জেনে কোন বিষয় নাক গলানো ঠিক নয়। 

নেই আঁকড়া =(নাছোড়বান্দা): কী যে করি ,নেই আকড়া লোকের পাল্লায় পড়েছি! কোনভাবেই পিছু ছাড়ছে না।

প ___________

পটল তোলা =(মারা যাওয়া): এলাকার সন্ত্রাসী পটল তুলেছে শুনে সবাই স্বস্তি পেল৷ 

পথে বসা =(সর্বস্বান্ত হওয়া): ডাকাত সবকিছু কেড়ে নিয়ে আমাদের পথে বসিয়েছে। 

পালের গোদা =(দলের চাই, সর্দার): এবার পুলিশ পালের গোদাকে ধরতে সক্ষম হয়েছে৷ 

পুকুর চুরি =(বড় রকম চুরি): ব্যাংক ডাকাতি করে ৫০ লাখ টাকা নিয়েছে এ যে রীতিমতো পুকুর চুরি।

ফ _________

 ফাক-ফোকর =(দোষত্রুটি): আইনের ফাঁক-ফোকরে আজকাল অনেক অপরাধী পার পেয়ে যাচ্ছে। 

ফেঁপে ওঠা =(হঠাৎ বিত্তবান হওয়া): স্বর্ণ চোরাচালান করে অনেকে ফেঁপে ওঠে।

ফৌড়ন কাটা =(টিপ্পনী কাটা): সবখানে ফৌড়ন কাটা অভ্যাসটি তোমার এখনো যায়নি ৷ 

ফোপরদালালি = (নাক গলানো আচরণ): ফোপরদালালি করা লোক দেখলে আমার গা জ্বলে ।

ব ____________

বকধার্মিক =(ভড): বকথধার্মিক লোকেরা নিজেকে খুব চালাক মনে করে। 

বর্ণচোরা আম =(কপট লোক): তুমি সত্যি একটা বর্ণচোরা আম । বাইরে থেকে দেখে তোমাকে বোঝা মুশকিল৷ 

বা হাতের ব্যাপার =(ঘুষ দেওয়া-নেওয়া): এ অফিসে বা হাতের ব্যাপার ছাড়া তাড়াতাড়ি কাজ সম্পন্ন হয় না।

বাজিয়ে দেখা =(পরখ করা): চালাকিতো কম মারছে না একটু বাজিয়ে দেখতে হবে সে আসলে ব্যাপারটা জানে কিনা। 

বাপের বেটা =(সাহসী): শাবাশ! বাপের বেটার মতোই করেছিস কাজটা । 

বালির বাঁধ =(ক্ষণস্থায়ী): বড়লোকের ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব আর বালির বাধ একই কথা। 

বিড়াল-তপস্বী =(ভও সাধু): সমাজে মাঝে মাঝে বিড়াল-তপস্বীদের তৎপরতা বেড়ে যায়।

বিদ্যার জাহাজ =(মূর্খ বা অশিক্ষিত লোক): তুমি আমাকে জ্ঞান দিতে এসো না, তুমি বিদ্যার জাহাজ !

বুকের পাটা =(সাহস): মাস্তানটার বিরুদ্ধে তুই অভিযোগ করেছিস! তোর বুকের পাটা আছে বলতে হবে। 

বুদ্ধির ঢেঁকি =(নির্বোধ): এ কাজের জন্য চাই চালাক-চতুর লোক, বুদ্ধির ঢেঁকি দিয়ে এ কাজ হবে না।

ভ __________

ভিজে বেড়াল =(বাইরে নিরীহ ভেতরে ধূর্ত): ভিজে বেড়াল লোকেরা নিজের স্বার্থের সময় আসল রূপ দেখিয়ে দেয়।  

ভরাডুবি =(সর্বনাশ): আদমজি পাটকল বশ্ধ হয়ে যাওয়ায় পাটচাষিদের এবার ভরাডুবি হয়েছে।  

ভুইফোড় =(হঠাৎ বড়লোক): মানুষ সচেতন হলে ভুঁইফোড়দের দাপট না কমে পারে না।  

ভূতের বেগার =(অযথা শ্রম দান): সারাদিন ভূতের বেগার খেটেই যাচ্ছি, মনে হচ্ছে না কোন লাভ হবে।  

ম _________

মামাবাড়ির আবদার =(চাইলেই পাওয়া যায় এমন): গতকালই তো টাকা নিলে, আজকে আবার কিসের টাকা? মামা বাড়ির আবদার পেয়েছ!

মিছরির ছুরি = (আপাতত মধুর হলেও শেষ পর্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক): তোমাকে ভালো মনে করেছিলাম, কিন্তু যে কথা শুনিয়েছ তাতে মিছরির ছুরি গেঁথেছে। 

য _________

যক্ষের ধন =(কৃপণের কড়ি): পৈতৃক ভিটেটা সে যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছে।  

র ________

রুই-কাতলা =(প্রভাবশালী): সমাজের দুই - কাতলাদের দাপটে গরিব দুঃখীদের কোন পাত্তাই নেই।  

রাশভারি = (গম্ছীর): আমাদের প্রধান শিক্ষক রাশভারি লোক। সবাই তাকে ভয় পায়। 

ল ___________

লেফাফা দুরস্ত =(বাইরের ঠাট ষোল আনা): ঘরে যে এমন টানাটানি, তা ওর লেফাফা দুরস্ত ভাব দেখে কে বুঝবে? 

শ _________

শাপে বর =(অনিষ্টে ইষ্ট লাভ): বড় কাকা চাকরি হারিয়ে ব্যবসায়ে ঢুকেছেন। এতে তার শাপে বর হয়েছে।

স __________

সেয়ানে সেয়ানে =(দুই সমান প্রতিদ্বন্দীর মধ্যে): দুই ভাইয়ের মধ্যে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই চলছে বহুদিন যাবত।  

সোনায় সোহাগা =(সার্থক মিলন): বেকার অবস্থায় সুন্দরী বউ পাওয়া, এ যে সোনায় সোহাগা! 

হ __________

হ-য-ব-র-ল =(উন্টোপাল্টা): অনুষ্ঠানের হ-য-ব-র-ল অবস্থা বাবাতো রেগে আগুন। 

হাড়-হাভাতে =(একেবারে নিঃষ): হাড়-হাভাতে ছেলেটা যে কীভাবে এখনো টিকে আছে বলতে পারব না।  

হাতটান =(ছোটখাটো চুরির অভ্যাস): ছেলেটা ভদ্র আছে বটে। তবে হাতটানের দোষ আছে। 

হাতের পাঁচ =(শেষ সম্বল): হাতের পাঁচ হিসেবে হাজার দুয়েক টাকা আছে৷ এটা দিয়ে কি ব্যবসা করব?

হালে পানি না পাওয়া =(কাজ হাসিলের উপায় না পাওয়া): না বুঝে বিরাট কাজে হাত লাগিয়েছে, কিন্তু হালে পানি পাচ্ছে না। 


Jakaria Daria

8 ब्लॉग पदों

टिप्पणियाँ