কোটা আন্দোলন কেন হয়েছে কি কারন ছিল এবং কোটা আন্দোলনের ইতিহাস শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত

বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযোদ্ধার পরে সর্ববৃহৎ ছাত্র আন্দোলন হচ্ছে কোটা সংস্কার আন্দোলন বা কোটা বিরোধী আন্দোলন

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সহ সর্বমোট ৫৬ শতাংশ নিয়োগ হয় কোটা ব্যবস্থার মাধ্যমে, বাকি ৪৪ শতাংশ নিয়োগ হয় সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের মধ্য থেকে। এর মানে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীরাই সংখ্যালঘু হয়ে আছে।

৫৬ শতাংশ কোটা সমূহের তালিকা:

মুক্তিযোদ্ধার কোটা = ৩০%

নারী কোটা = ১০%

জেলা কোটা = ১০%

উপজাতি কোটা = ৫%

প্রতিবন্ধী কোটা = ১%

** সাধারণ কোটা হচ্ছে ২৬ শতাংশ এবং শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধায় কোটা হচ্ছে ৩০% ।

এই কারণেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাদের অভিযোগ এত এত কোটা থাকার কারণে কম যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থী বেশি চাকরি পাচ্ছে।

**বিশ্বের অন্যান্য দেশেও কোটা পদ্ধতি রয়েছে, কিন্তু কোন দেশেই তা মেধাবী শিক্ষার্থীদের থেকে কোটাধারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়।

আর্থসামাজিক বৈষম্য দূর করার জন্য যে কটা সিস্টেম চালু করা হয়েছিল সেটাই এক সময় বৈষম্যের কারণ হয়ে দাঁড়ালো ' এটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা'।

*** বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা শুরু হয়েছিল এবং কেনই বা শিক্ষার্থীরা এটা সংশোধন করার জন্য আন্দোলন করছে এবার সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক :-

বাংলাদেশের অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধারাই ছিলেন গ্রামের সাধারণ জনগণ যারা তৎকালীন সময়ে সরকারি চাকরিসহ সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা লাভের ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল। সেই সাথে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের শহীদ হয়েছেন, কেউবা হাত-পা হারিয়ে পঙ্গু হয়েছেন। 

যারা শারীরিক সুস্থতা নিয়ে বেঁচে ছিলেন তাদেরও অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয় ।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের স্বাধীনতায় অবদান রাখা মহান বীর মুক্তিযোদ্ধারা যেন সমাজে পিছিয়ে না পড়ে এজন্য একটি বিশেষ কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়।

তবে অনেক মুক্তিযোদ্ধাই শিক্ষিত ছিলেন না বা তাদের সরকারি চাকরি করার বয়স বা যোগ্যতা ছিল না।

এই কারণে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরকে বিশেষ এই কোটার আওতায় নিয়ে আসা হয়।

মুক্তিযোদ্ধার এই কোটা চালু হয়েছিল একটি অন্তর্বর্তীকালীন বা অস্থায়ী নিয়োগের মাধ্যমে। যা পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় যাব চলমান থেকেছে।

এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বিতীয় প্রজন্ম ছাড়িয়ে তৃতীয় প্রজন্ম অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি নাতনিরাও এই কোটার সুবিধা পেতে থাকে। এখানেই শুরু হয় আপত্তি।

** সংবিধানে সমাজের অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য কোটার কথা বলা হয়েছে। এখানে নারীদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু কোথাও মুক্তিযোদ্ধাদের কথা আলাদাভাবে বলা হয়নি কারণ, সকল মুক্তিযোদ্ধারা গ্রামের পিছিয়ে পড়া বা হতদরিদ্র লোক ছিল না। অনেক শহুরে ও ধনী লোকেরা ও মুক্তিযুদ্ধায় অংশগ্রহণ করেছে। এ কারণেই মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সরাসরি অনগ্রসর বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বলার কোন সুযোগ নেই।

কোটা আন্দোলনের সূত্রপাত:

বাংলাদেশের দীর্ঘদিন পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। সেই সাথে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে রয়েছে আনসার ও প্রতিরক্ষা বাহিনী কোটা। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রয়েছে ৫০ শতাংশ নারী কোটা। সব মিলিয়ে এত কোটার কারণে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীরা চাকরি থেকে বঞ্চিত ছিল।

এরপর বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সাল থেকে কোটা সংস্কার ও কোটাবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে । তাদের দাবি ছিল কোটা সংস্করণ ও কোটা ৫৬% থেকে নামিয়ে এনে ১০ % করা হোক।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবি মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে একটি পরিপত্র জারির মাধ্যমে পুরো কোটা সিস্টেমটাকে বাতিল বলে ঘোষণা দেয়।

এরপর ২০২১ সালে এসে কিছু মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরে পাওয়ার জন্য উচ্চ আদালতের রিট করেন। 

তারই প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০২৪ সালের জুন মাসের ৫ তারিখে মুক্তিযোদ্ধা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে ঘোষণা দিয়ে রায় প্রদান করেন।

এর মাধ্যমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা আবারো পুনর্বহল হয়ে যায়। হাইকোর্টের এই রায়ের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে আন্দোলনের সৃষ্টি করে। হাইকোর্টের ওই রায় বাতিল এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। কিন্তু সামনে কুরবানী ঈদের কারণে ২৯ শে জুন পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখেন শিক্ষার্থীরা। 

এরপর ৩০ শে জুন ২০২৪ থেকে আবারো নতুন করে আন্দোলন শুরু হয় এবং ২০২৪ সালের পহেলা জুলাই থেকে এই আন্দোলন গোটা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

আন্দোলনের শুরুর দিকে শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি করে এবং পরে তা এক দফা তে নামিয়ে আনেন।

সেই এক দফা দাবি হলো:-

**সকল গ্রেডে অযৌক্তিক এবং বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে আইন পাশ করতে হবে। তারমানে শিক্ষার্থীদের মূল কথা হলো কোটা সংস্কার করে ৫ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। 

সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করা এবং ২০১৮ সালে একেবারেই সম্পূর্ণ কোডটা ব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়ার পেছনে "সরকারের সুবিবেচনার অভাব ছিল বলে মনে করেছেন বিশ্লেষকেরা"। 

প্রথম যখন সরকারি চাকরিতে কোটা ক্রমবর্ধমান ভাবে বাড়িয়ে ৫৬ শতাংশে নিয়ে যাওয়া এটি ছিল একতরফা সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে কোটা বাতিলের ক্ষেত্রও কোটা সংস্কার না করে সরকার সরাসরি জেদের বসে সকল কোটা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। কোটা আন্দোলনের শিক্ষার্থীরাও কোটা পুরোপুরি বাতিলের কথা বলেননি।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে যে পাঁচটি কোটা সংস্করণের বিষয় ছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটার সংস্কার। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা চেয়েছিল ৫৬ শতাংশ কোটার মধ্যে যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ সেদিকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নামিয়ে আনা হোক। কিন্তু তাদের আন্দোলনের সেই মূল বক্তব্য সরকার মনোযোগ দিয়ে না শুনে সকল কোটা বাতিল করে দেয়। যার মাধ্যমে শুরু হয় আরেকটি নতুন সংকট।

তখনই যদি সরাসরি কোটা বাতিল না করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের দাবি অনুযায়ী কোটা সংস্কার করা হতো তাহলে , মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের আপত্তির সূত্র ধরে নতুন করে আর কোন কোটাবিরোধী আন্দোলন তৈরি হত না।

* বাংলাদেশের জনপ্রশাসন ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে অতীতে বাংলাদেশ সরকার তিনটি পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রিফর্মস কমিশন স্থাপন করেছিল। তিনটি কমিশনই সুস্পষ্টভাবে বলেছিল যে কোটা একেবারে তুলে দেওয়া উচিত তবে হঠাৎ করে কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি তুলে দিলেও তা নিয়েও সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে মত দিয়েছিলেন কোন কোন বিশেষজ্ঞ।

২০১৮ সালের সব কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করার পর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানরা কোটা বহলের দাবিতে আন্দোলন করেন। নারী অধিকার এবং প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন গুলো আলাদা আলাদাভাবে আন্দোলন করেন। সরকারি প্রশাসনের অনেকেই তখন বলেছিলেন নারী এবং উপজাতি কোটা তুলে দেওয়া পুরোপুরি ঠিক হবে না। সেই সাথে প্রতি পাঁচ বছর পর পর গোটা ব্যবস্থা মূল্যায়ন করতে হবে তবে এসব কথা আমলে না নিয়ে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়।

**স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ সময় মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে কোন প্রকার অসন্তোষ ছিল না। সমস্যা শুরু হয় যখন মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনীরা এই কোটার সুবিধা নিতে থাকে।

*মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতার জন্য নিঃসন্দেহে অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু তাদের তৃতীয় প্রজন্ম কোনভাবেই মুক্তিযোদ্ধার কোটা পাওয়া যৌক্তিক বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা।

তাছাড়া স্বাধীনতার পরেও বহু মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের আর্থিক উন্নয়ন ঘটে সে কারণে অনেক মুক্তিযোদ্ধারা ও সরকারি কোটা ব্যবস্থা চান না। তারা মনে করেন তাদের নাতি-নাতনিদের ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মত যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়া উচিত।

কোটা আন্দোলনের ভয়াবহ চিত্র:

৩০ শে জুন থেকে শুরু করা আন্দোলন খুব তাড়াতাড়ি সারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে, এই আন্দোলনে যুক্ত হন বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সহ স্কুল শিক্ষার্থীরাও। শিক্ষার্থীরা একটি যৌক্তিক দাবি নিয়ে রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু করেন। কিন্তু আন্দোলনের মাঝে সরকার প্রধানের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মাঝে আন্দোলনের তীব্রতা বেড়ে যায় ।

সরকার প্রধানের বিতর্কিত বক্তব্যটি হল:

সরকারি চাকরিতে কোটা মুক্তিযোদ্ধার নাতি নাত্নীরা পাবেনা, তাহলে কি রাজাকারের নাতি নাত্নিরা পাবে?

সরকার প্রধানের এই বক্তব্যকে নিজেদের ঘাড়ে চাপিয়ে নিয়ে শিক্ষার্থীরা স্লোগান বের করে: - তুমি কে আমি কে "রাজাকার রাজাকার", কে বলেছে কে বলেছে সরকার সরকার। 

এই স্লোগান দেওয়ার পরে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতাগণ উস্কানি মূলক বক্তব্য প্রদান করেন। এবং ছাত্রলীগকে উসকে দেয় শিক্ষার্থীদের শায়েস্তা করার জন্য। 

ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা শিক্ষার্থীদের উপরে প্রথমে অমানবিক নির্যাতন চালায় এবং শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধোয়া শুরু হয়।

শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের মধ্যে এই সংঘর্ষের মোকাবেলায় সরকার প্রথমে পুলিশ মোতায়ন করেন । এতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে থাকে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ এবং পুলিশের তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। পুরো ঢাকার শহর যেন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ রাবার বুলেট এবং টিয়ারশীল সহ শব্দ বোমার মাধ্যমিক পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করে কিন্তু কোন ভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। 

এরপরে শুরু হলো ইতিহাসের এক ভয়ংকর অধ্যায়। পুলিশ সরাসরি ছাত্রদের দিকে গুলি করতে থাকে । পুলিশের গুলিতে সর্বপ্রথম নিহত হন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ । এরপর একই দিনে চার জনের প্রাণহানি হয়।

১৩ই জুলাই শনিবারের সংঘাতের ফুটেজে দেখা গেছে সেনা সদস্যরা বিক্ষোভ কারীদের উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়ছে।

প্রথম আলো পত্রিকার সূত্রে জানা গেছে মৃত সংখ্যা ১৬ই জুলাই মঙ্গলবার ৬ জন, ১৮ই জুলাই বৃহস্পতিবার ৪১জন, ১৯ শে জুলাই শুক্রবার ৭৯জন, ২০শে জুলাই শনিবার ৩৬জন, ২১শে জুলাই রবিবার ২০জন, ২২ শে জুলাই সোমবার ৫জন, সর্বমোট ১৮৭ জন ।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল ঢাকা। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষের কারণে ঘটেছে অনেক প্রাণহানি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সারা দেশে কারফিউ যারিসহ সেনা মোতায়ন করা হয়েছে সরকার। এরপর থেকে ঢাকার অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে।

কোটা আন্দোলনে ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ চিত্র:

আন্দোলনকারীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে একটি সাংঘাতিক সন্ত্রাসী মহল রাষ্ট্রের অনেক বড় ক্ষয়ক্ষতি করেছে এবং দৃশ্যমান হচ্ছে সহিংসতার অনেক ক্ষতচিহ্ন যা দেখে যে কারো চোখ কপালে উঠতে পারে।

ক্ষয়ক্ষতের তালিকায় রয়েছে গণমাধ্যমের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন পুড়িয়ে দেওয়া এবং ৪০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে, সেতু ভবন পুড়িয়ে দেওয়া, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে অগ্নিসংযোগ দেয় এবং তাদের ৫৩ টি গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ৪০টি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। অসংখ্য যানবাহন পুড়িয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। ১৮ ও ১৯শে জুলাই সেতু ভবনে হামলার মাধ্যমে শুরু হয় এই ধ্বংসযজ্ঞ পুড়িয়ে দেওয়া হয় ৫৫ টি যানবাহন, লুট করে নিয়ে যায় অফিসের অনেক মালামাল, সরকারি ডাটা সেন্টার পুড়িয়ে দিয়েছিল এবং অসংখ্য আইএসপি তার পুড়িয়ে দেওয়ার কারণে সারা দেশে প্রায় সপ্তাহখানেক ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।

অগ্নিসংযোগ করা হয় বি আর টি এ মিরপুরের এক মেট্রো সার্কেল অফিসে, ২৫ জুলাই সকালে প্রধানমন্ত্রী মিরপুরের মেট্রোরেল অফিসে পরিদর্শন করেন এবং এমন ধ্বংসযজ্ঞের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন । মহাখালীতে ভাঙচুর করা হয় সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয় তিনটি গাড়ি ও দুইটি মোটরসাইকেল , উত্তরায় আগুন দেওয়া হয় পাঁচটি গাড়িতে, সন্ত্রাসীদের সহিংসতার হাত থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশ মেট্রো রেল, মেট্রোরেলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে হামলা করেন দুর্বৃত্তরা, সন্ত্রাসীরা পুড়িয়ে দিয়েছিল হানিফ ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ীর অংশের টোল প্লাজা। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল সদ্য উদ্বোধনকৃত ১১ টি টোল প্লাজা। সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পুরাতন ভবন পুড়িয়ে দেওয়া হয় ১১ টি গাড়ি। সন্ত্রাসী হামলার হাত থেকে রেহাই পাইনি ফায়ার সার্ভিস তিনটি অগ্নি নির্বাপক গাড়িতে আগুন দেয় এবং ভাঙচুর করা হয় তাদের অফিস।

আন্দোলনের ফলাফল

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং জামাত শিবিরের ভয়ংকর তাণ্ডবের মুখে হাইকোর্ট ২৮ জুলাই কোটা সংস্কার করে মেধায় ৯৩% এবং মুক্তিযোদ্ধা ৫% প্রতিবন্ধী ১% উপজাতি ১% করে দেন। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলেও শিক্ষার্থীরা তাদের মধ্যে যারা নিহত হয়েছে তাদের বিচারের দাবি সহ আরো ৯ দফা দাবি করে। এরপর শুরু হয় তুমুল সংঘর্ষ পুলিশের সাথে শিক্ষার্থী ,বিএনপি ,জামাত শুভ সাধারন জনতা । নিহত হন অসংখ্য মানুষ, যার হিসাব সরকার দিতে পারেনি।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাক

আন্দোলনের নিহত শিক্ষার্থীদের সঠিক হিসেব দিতে না পারায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বাড়তে থাকে এরপর থেকে শুরু হয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাক , শিক্ষার্থীরা দফায় দফায় তাদের কর্মসূচি পালন করে ওইদিকে সরকার সামরিক বাহিনী দিয়ে তাদের দমন করার চেষ্টা করে ঝরে যায় অনেক তাজা প্রাণ কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন থামায় না । অবশেষে ছাত্ররা এক দফা দাবি সরকারের পদত্যাগের জন্য আন্দোলন শুরু করে। ৫ ই আগস্ট সরকার বিরুদ্ধে সকল জনতা এবং রাজনৈতিক দলগুলো গণভবন দখল করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ ই আগস্ট দুপুর ২ঃ০০ টায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে দেশ ত্যাগ করেন।

আন্দোলনে নিহতদের সংখ্যা: 

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের তথ্য মতে , বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৬ জুলাই থেকে ১১ ই আগস্ট পর্যন্ত ৬৫০ জনের অধিক মানুষ মারা গেছে এর মধ্যে ৩২ জনই শিশু। শুধু চার আগস্ট পর্যন্তই মারা গেছে ৪০০ জন এবং ৫ ও ৬ আগস্টের সহিংসতায় মারা গেছেন ২৫০ জন। এই তথ্যের সত্যতা যাচাই বিভিন্ন গণমাধ্যমের হিসাব এবং শিক্ষার্থীদের মুভমেন্ট এর উপর মিষ্টি করে করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষার্থী, পুলিশ, পথচারী, সাধারণ মানুষ, শিশুসহ আরো অনেক। সহিংসতার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা বাহিনীর উপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দিয়েছেন‌।

 


Jakaria Daria

49 Blog posts

Comments