ব্যাকরণ ও বাংলা ব্যাকরণ:
ব্যাকরণে ভাষার স্বরূপ এবং প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। শব্দ, বাক্য, ধ্বনি ইত্যাদি বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে ভাষার মধ্যে সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করাই হচ্ছে ব্যাকরণের কাজ । ব্যাকরণগ্রন্থে এসব বৈশিষ্ট্য গুলোকে সূত্রের আকারে সাজানো হয়ে থাকে।
ব্যাকরন কাকে বলে?
যে বিদ্যাশাখায় বাংলা ভাষার স্বরূপ এবং প্রকৃতি বর্ণনা করা হয় তাকেই বাংলা ব্যাকরণ বলে থাকি।
প্রথম বাংলা ব্যাকরণ প্রকাশিত হয় ১৭৪৩ সালে পর্তুগিজ ভাষায়। এর লেখক ছিলেন মানোএল দা আসসুম্পসাউ ৷ তার বাংলা-পর্তুগিজ অভিধানের ভূমিকা অংশ হিসেবে তিনি এটি রচনা করেন৷ এরপর ১৭৭৮ সালে প্রকাশিত হয় নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড প্রণীত ইংরেজি ভাষায় রচিত পূর্ণাঙ্গ একটি বাংলা ব্যাকরণ। বইটির নাম 'এ গ্রামার অব দি বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ' ৷ ১৮০১ সালে উইলিয়াম কেরি এবং ১৮২৬ সালে রামমোহন রায় ইংরেজি ভাষায় আরো দুটি উল্লেখযোগ্য বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন। ১৮৩৩ সালে প্রকাশিত রামমোহন রায়ের 'গৌড়ীয় ব্যাকরণ' বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম বাংলা ব্যাকরণ ।
ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়:
কোন ভাষা হলো বাক্যের সমষ্টি ৷ বাক্য গঠিত হয় শব্দের মাধ্যমিক। আবার শব্দ তৈরি হয় কিন্তু ধ্বনি দিয়ে । এদিক থেকে চিন্তা করলে ভাষার ক্ষুদ্রতম উপাদান হলো ধ্বনি। এই ধ্বনি, শব্দ, বাক্য - প্রত্যেকটি অংশই হল ব্যাকরণের আলোচ্য ৷ এছাড়া শব্দের এবং বাক্যের বহু ধরনের অর্থ হয়। সেসব অর্থ নিয়েও আবার ব্যাকরণে আলোচনা করা হয়। ব্যাকরণের এসব আলোচ্য বিষয়গুলো বিভক্ত হয় অন্তত চারটি ভাগে, যথা - ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব ও অর্থতত্ত্ব ৷
ধ্বনিতত্ত্ব:
ধ্বনিতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে ধ্বনি। আমরা জানি লিখিত ভাষায় ধ্বনিকে যেহেতু বর্ণ দিয়ে প্রকাশ করা হয়, তাই বর্ণমালা সংক্রান্ত আলোচনা ধ্বনিতত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত। ধ্বনিতত্ত্বের মূল আলোচ্য উচ্চারণ-প্রক্রিয়া, ধ্বনির বিন্যাস,বাগ্যন্ত্র, বাগ্যস্ত্রের, স্বর ও ব্যঞ্জনধ্বনির বৈশিষ্ট্য, ধ্বনিদল প্রভৃতি ৷
রূপতত্ত্ব :
'রূপতত্ত্বে শব্দ এবং তার উপাদান নিয়ে আলোচনা করা হয়ে থাকে। এই আলোচনায় বিশেষ্য , বিশেষণ,সর্বনাম, ক্রিয়া, ক্রিয়াবিশেষণ ইত্যাদি স্থান পায়। অতি বিশেষ গুরুত্ব পায় শব্দগঠন প্রক্রিয়া ।
বাক্যতত্ত্ব :
সাধারণত বাক্য নিয়ে আলোচনা করা হয় বাক্যতত্ত্বে । বাক্যের নির্মাণ ও এর গঠন হচ্ছে বাক্যতত্ত্বের মূল আলোচ্য বিষয়৷ বাক্যের মধ্যে পদ এবং বর্গ কীভাবে বিন্যন্ত থাকে, বাক্যতত্ত্বে এটা বর্ণনা করা হয়। এক ধরনের বাক্যকে অন্য ধরনের বাক্যে রূপান্তর করা, বাক্যের বাচ্য, উক্তি ইত্যাদি বাক্যতত্ত্বের মূল আলোচ্য বিষয়। বাক্যের যোগ্যতা,কারক বিশ্লেষণ, বাক্যের উপাদান লোপ, যতিচিহ্ন প্রভৃতিও হচ্ছে বাক্যতত্ত্বে আলোচিত হয়ে থাকে৷
অর্থতত্ত্ব :
অর্থতত্ত্বে ব্যাকরণের যে অংশে শব্দ, বর্গ এবং বাক্যের অর্থ নিয়ে আলোচনা করা হয় , আর সেই অংশের নাম অর্থতত্ত্ব। এটাকে বাগর্থতত্ত্বও বলা হয়ে থাকে। বিপরীত শব্দ, শব্দজোড় ,প্রতিশব্দ, বাগ্ধারা প্রভৃতি বিষয় অর্থতত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত । তাছাড়া শব্দ, বর্গ ও বাক্যের ব্যঞ্জনা নিয়েও বাংলা ব্যাকরণের এই অংশে আলোচনা হয়ে থাকে৷